টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহী বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা
চুঁচুড়া বিধানসভা থেকে প্রার্থী হতে না পেরে রিতিমত ফেসবুকে পোষ্ট করে রাজনীতি থেকে সরে দাড়াবেন বলে জানিয়েছেন সুবীর নাগ (Subir Nag)। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন আমি প্রতারিত হয়েছি। তাই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালাম।
রবিবার তৃতীয় ও চতুর্থ দফার যে ৬৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি, তাতে হুগলির সাংসদ লকেটকে চুঁচুড়ার প্রার্থী করা হয়েছে। তার পরেই অবসরের কথা ঘোষণা করেন সুবীর। দলের প্রতি অভিমান থেকেই যে এমন সিদ্ধান্ত, তা নিয়েও কোনও রাখঢাক করেননি সুবীর। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও যেন দল আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। তেমনই মনে হয়েছে আমার। এখনও দলের আদর্শ মাথায় নিয়েই রয়েছি। কিন্তু যে পরিশ্রম করে দলকে দাঁড় করিয়েছি, তার মূল্যায়নটা কোথাও যেন হল না!’’
অন্যদিকে শ্রীরামপুর থেকে ভোটের টিকিট না পেয়ে হতাশ প্রাক্তন জেলা সভাপতি ভাষ্কর ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছে, আমি হতাশ। এখন আমার ভাবার সময় হয়েছে। তবে আমি এখনই কিছু বলছি না।
অন্যদিকে বিজেপির (BJP) অপর নেতা স্বপন পাল বলেন, আমি দলের অনুগত সৈনিক। দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটাই ঠিক।
সব মিলিয়ে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষনা হতেই ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপির নেতাদের একাংশের।
যদিও চুঁচুড়ায় বিজেপি-র একাংশে দাবি, লকেটের ‘কলকাঠি’তেই প্রার্থী হওয়া হল না সুবীরের। ওই অংশের দাবি, হুগলি থেকে লকেট যখন লোকসভার প্রার্থী হন, তখন তিনি একেবারেই আনকোরা ছিলেন। সেই সময় সুবীরের উপরই ভোট উতরোনোর দায়িত্ব এসে পড়ে। অভিনেত্রীকে রাজনীতির আঁটঘাট হাতে ধরে তিনিই শিখিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব বাড়তে শুরু করলে, ক্রমশ হুগলির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে শুরু করেন তিনি। সভাপতি পদ থেকে সুবীরের অপসারণ এবং সেই জায়গায় গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের নিয়োগের পিছনেও তাঁর হাত ছিল বলে ওই অংশের দাবি। সুবীর-ঘনিষ্ঠদেরও দাবি, চুঁচুড়ার প্রার্থী হিসেবে সুবীরের নাম এ বার প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। রাজ্যে দলের ওবিসি মোর্চার সভাপতি স্বপন পাল ছাড়া তেমন কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল না তাঁর। তালিকায় একেবারে উপরেই নাম ছিল তাঁর। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক হয়ে প্রার্থিচয়ন নিয়েও ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন লকেট। তার জন্যই শেষ মুহূর্তে সুবীরের নাম বাদ গেল।
সুবীর-ঘনিষ্ঠরা আরও অভিযোগ করেন যে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর নব নির্বাচিত দিলীপ ঘোষ এবং লকেটকে চুঁচুড়ায় ডেকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন সুবীর। ভোটের আগে চণ্ডীতলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সেই সময় কাছে ডেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন মোদী। পিঠ চাপড়ে দেন। দুর্গাপুজো কমিটিগুলিতে তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে গেরুয়া রাজনীতিতে বাঙালি আবেগ মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাতেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। সুবীর-ঘনিষ্ঠদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠায় সুবীরের অন্তরায় হয়ে ওঠেন লকেট। যে কারণে সভাপতি পদ চলে যাওয়ার পর পর্যবেক্ষকের মতো ‘নামসর্বস্ব’ পদে বসানো হয় সুবীরকে। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সম্প্রতি চুঁচুড়ার সভাতেও মোদীর কাছে সুবীরকে ঘেঁষতে দেননি লকেট। নিজেকেই হর্তাকর্তা হিসেবে তুলে ধরেন। এমনটাই সুবীর-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ।