লোকসভার হাওয়া উধাও! উত্তরে চিন্তায় বিজেপি
লোকসভা নির্বাচনের গেরুয়া ঝড় এখন কি ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে? তৃণমূল সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নমূলক কাজে ধাক্কা খেয়েছে আরএসএসের (RSS) প্রচার কৌশলও? বিধানসভা ভোটের মুখে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই দুশ্চিন্তায় জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউন এবং পরবর্তীতে দুয়ারে সরকারের মতো কর্মসূচির জেরেই শক্তি হারিয়েছে পদ্মশিবির।। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভালো ফল হওয়ার ক্ষেত্রে আরএসএসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নীরবে দিনের পর দিন গ্রামে-গঞ্জে নিরীহ গরিব মানুষকে নিজেদের মতো করে বুঝিয়ে বিজেপির প্রতি একটা বড় অংশের মানুষকে তারা জোটবদ্ধ করতে সফল হয়েছিল বলে মত অনেকের। কিন্তু রাজনৈতিকমহলের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের ছ’মাস পর থেকেই চা-বলয় সহ উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আরএসএস তথা বিজেপি থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে। কারণ, ভোটে জেতার পর বিজেপি প্রতিশ্রুতিমতো এখানকার গরিব মানুষের পাশে থাকেনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) যেভাবে গরিব মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে ধারাবাহিক উন্নয়নের কাজ করে গিয়েছেন, তাতে অনেকেরই বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ ঘটে।
আরএসএস সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটকে (West Bengal Elections 2021) সামনে রেখে গ্রামেগঞ্জে কাজ করতে গিয়ে তাদের কার্যত বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের মুখের উপরে বলে দিয়েছে, আর মিথ্যা স্বপ্ন তাঁরা দেখতে চান না। যদিও ওই ব্যখ্যা মানতে নারাজ বিজেপির শিলিগুড়ির সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দময় বর্মন। তিনি বলেন, আরএসএস একটি সামাজিক সংগঠন। রাজনীতির সঙ্গে ওদের সম্পর্ক নেই। ওরা ওদের মতো কাজ করে। সেখানে বিজেপির প্রভাব বৃদ্ধি কিংবা কমার উপর কিছু নির্ভর করে না। যাঁরা এসব প্রচার করছেন, তা একদম ঠিক নয়। আমাদের দলের জনসমর্থনে টাল খেয়েছে, এরকম কোনও আভাস আমরা পাইনি। সংগঠন মজবুত আছে।
বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের জেরে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আবার ব্যাপকভাবে তৃণমূল সরকারের প্রতি আস্থা দেখাতে শুরু করেছে। এই খবর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়ার পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চিন্তায় পড়ে যায়। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য তাই তারা মূলত তৃণমূল ভাঙিয়ে ওই দলের নেতাদের পদ্মমুখী করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। আর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরএসএসের সঙ্গে তাদের ঠান্ডা লড়াইও শুরু হয়েছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরএসএসের উত্তরবঙ্গের প্রথম সারির এক কার্যকর্তা বলেন, এবার মানুষের কাছ থেকে আমরা প্রত্যাশামতো সাড়া পাচ্ছি না। কারণ, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপি সরকার এখানকার গরিব মানুষের জন্য প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। তাই লোকসভা নির্বাচনের ছ’মাস পর থেকেই চা বলয় সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার গরিব মানুষ আমাদের কথা শুনতে চায় না। উল্টে তাঁরা গরিব মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রকল্প, সুযোগ সুবিধাকে ভরসা হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে। এজন্যই লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলাম।
উত্তরবঙ্গের ওই আরএসএস কর্তা স্বীকার করেন যে, বিজেপি (BJP) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে রান্নার গ্যাস, পেট্রল, ডিজেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়েছে, সেটা গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষকে বিজেপি বিরোধী করে তুলেছে।
এক্ষেত্রে নিজেদের ব্যর্থতা মানতে নারাজ উত্তরবঙ্গে আরএসএসের প্রথম সারির আর এক কার্যকর্তা। তিনি বলেন, করোনার জন্য মানুষের কাছে সেভাবে গত এক বছর যেতে পারিনি। ফলে মানুষকে সেভাবে আমাদের নীতি আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি।
কিন্তু তার জন্য বিভিন্ন দল থেকে নেতা ভাঙিয়ে এনে ভোট বৈতরণী পার হতে চাওয়াও তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা মনে করেন, এখানকার বিজেপি সাংসদরা তাঁদের ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ ও নীতি নিয়ে প্রচার চালিয়ে গেলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এত সহজে এখানকার মানুষ এভাবে আবার তৃণমূলের (Trinamool) প্রতি ভরসা দেখাতে পারত না। তাদের পাশে থেকে আশা ভরসা জাগানোর কাজ দলীয় এমপিরা ঠিকমতো করতে পারেননি বলেই চা বলয় খেকে শুরু করে গ্রামের গরিব মানুষ সহ সকলের মনে ভরসা জোগাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী ও বিনামূল্যে রেশনের চাল।