পূর্ব মেদিনীপুরে আদি-নব্য দ্বন্দ্ব, গোঁজ প্রার্থীদের নিয়ে চিন্তায় বিজেপি
আদি-নব্য সংঘাতের জেরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক বিধানসভা আসনে গোঁজ প্রার্থী হচ্ছেন বিজেপি (BJP) নেতারা। প্রার্থী বাছাই নিয়ে অসন্তোষের জেরে অনেক জায়গায় ভোট প্রচারের গতি থমকে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষুব্ধরা গোঁজ প্রার্থী হওয়ায় সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। এর ফলে তৃণমূল ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের পুরনো কর্মীদের একটা বড় অংশ নব্য বিজেপির আধিপত্য মানতে চাইছেন না। সেই ক্ষোভে তাঁরা প্রার্থী হয়ে দলকেই সমঝে দিতে চাইছেন।
তমলুক বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন দলের জেলা সহ সভাপতি পেশায় চিকিৎসক হরেকৃষ্ণ বেরা। এই আসনে টিকিট প্রত্যাশী অনেকেই ছিলেন। শেষমেশ দল ওই চিকিৎসকের উপর ভরসা রেখেছে। কিন্তু, দলের এই সিদ্ধান্তে একমত হতে পারেননি শহিদ মাতঙ্গিনী মণ্ডল-২ এর প্রাক্তন সভাপতি ভীম পাত্র। তিনি কিষান মোর্চার জেলা কমিটির সদস্য এবং নবনির্মাণ ভারতের রাজ্য সভাপতি পদে আসীন। ভীমবাবু তমলুক বিধানসভা কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা করেছেন। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। নিজের সংগঠন টিকিয়ে রাখার জন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি।
পাঁশকুড়া পশ্চিম কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সিন্টু সেনাপতি। তিনি পাঁশকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা। দলের প্রার্থী মনোনয়নে খুশি হতে না পেরে ঘোষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর কাটাল বুথ সভাপতি সরোজ পট্টনায়েক নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ওই বিধানসভা কমিটির আর্থিক প্রমুখ পদে আছেন। সরোজবাবু বলেন, আমরা শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে পার্টি করছি। আমরা চেয়েছিলাম শিক্ষিত সমাজের অন্তর্ভুক্তির মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা আসুক। মারপিট, বোমাবাজি, খুনখারাবি, টাকার বিনিময়ে চাকরি, এসবে আমরা বিশ্বাসী নই। বিজেপির পঞ্চনীতি আদর্শ এবং আরএসএসের চিন্তাধারায় আমরা বিশ্বাসী। কিন্তু, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এইসব বিষয়গুলিকে কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। নীতি আদর্শের জায়গা থেকেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ফজলুর রহমান শেখ এবার মহিষাদল বিধানসভায় দলের গোঁজ প্রার্থী। ২০১৮সাল থেকে তিনি জেলা বিজেপির সংখ্যালঘু মুখ ছিলেন। দলে গুরুত্ব না পেয়ে তিনি সংখ্যালঘু সেলের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। ফজলুর সাহেব বলেন, আমি কাজের সুযোগ পাচ্ছি না। দীর্ঘদিন ধরে পার্টি করলেও এখন আমাকে ঠিকমতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। আমাকে এড়িয়ে অন্যদের নিয়ে কাজ চালাচ্ছে দল। সেজন্য আমি ইস্তফা দিয়ে প্রার্থী হয়েছি।
তমলুক, পাঁশকুড়া পশ্চিম, মহিষাদলের মতো জেলার আরও কয়েকটি আসনে বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতারা গোঁজ প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। এই ঘটনায় চাপে পড়েছে গেরুয়া শিবির। এর নেপথ্যে জেলা নেতৃত্বের একটা অংশের মদত আছে বলে জানা গিয়েছে। এই মুহূর্তে নব্য বিজেপির আধিপত্য চলছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে। যেকারণে আদি বিজেপি কর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছেন। আর তাতেই ভোটের মুখে কোন্দল বাড়ছে। এর প্রভাব ভোটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে গেরুয়া শিবির।
ভোট প্রচারে তৃণমূল (Trinamool) কয়েক কদম এগিয়ে থাকলেও আদি-নব্য সংঘাতে অনেক জায়গায় সেভাবে প্রচার জমাতে পারছে না পদ্মশিবির। জেলা বিজেপি সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, এসব সামান্য বিষয়। ভোটে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না।