ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে দেশে এক নম্বর বাংলা
পুজোর পর থেকেই রাজ্যে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ চাঙ্গা হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও মিলতে শুরু করেছিল আগেই। সেই সদর্থক পরিস্থিতি যে গ্রামেও ছড়িয়েছে, তার ইঙ্গিত মিলল এবার। প্রান্তিক মানুষের কাছে নগদ টাকার জোগান যে বেড়েছে, তার প্রমাণ দিল দেশের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন মাইক্রোফিনান্স ইনস্টিটিউশনস নেটওয়ার্ক। তারা বলছে, যে পরিমাণ ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়েছে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে, তাতে দেশের সেরা পশ্চিমবঙ্গ। শুধু তাই-ই নয়, মাথা পিছু ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রেও সবার আগে রয়েছে বাংলা। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলি সাধারণত কোনও ছোট ব্যবসা বা আর্থিক কার্যকলাপের জন্য ঋণ দান করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার হারও এখানে সবচেয়ে বেশি। এর থেকে স্পষ্ট, টাকা ধার নিয়ে আর্থিক কর্মযজ্ঞে এগিয়ে থাকায় দেশকে দিশা দেখাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা।
ব্যবসা করার জন্য সাধারণ মানুষকে ঋণ (Loan) দেয় ব্যাঙ্ক। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধার চাইলেই তা দিতে রাজি হয় না ব্যাঙ্ক। যে ব্যবসার জন্য টাকা ধার নেওয়া হচ্ছে, তা আদৌ লাভজনক কি না, তা যাচাই করে নেয় তারা। এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হরেক নথি জোগাড় করার ঝক্কি। যাঁরা এই সব কারণে ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়া এড়িয়ে চলেন, তাঁদের জন্য ঋণ দেয় ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেখানে ব্যাঙ্ক পরিষেবা নেই, সেখানেও ভরসা করতে হয় এই সংস্থাগুলির উপর। এগুলিকেই বলা হয় ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা বা মাইক্রো ফিনান্স কোম্পানি। এক্ষেত্রে ঋণের অঙ্ক যেমন বেশি হয় না, তেমনই তা শোধ করার ক্ষেত্রে আর্থিক চাপ বাড়ে না। সাধারণত ফি সপ্তাহে পরিশোধ করতে হয় ঋণের টাকা। এই মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলি যেহেতু ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে টাকা ধার নিয়ে, এবং সেই টাকা সাধারণ মানুষকে ঋণ হিসেবে দেয়, তাই তাদের দেওয়া ঋণে সুদের হার ব্যাঙ্কের তুলনায় বেশি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার আওতায় থেকে ব্যবসা চালাতে হয় এই মাইক্রো ফিনান্স সংস্থাগুলিকে।
ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কতটা এগিয়ে বাংলা? হিসেব বলছে, চলতি আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এরাজ্য থেকে গড়ে মাথা পিছু ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৫৮৫ টাকা। এরপর রয়েছে অসম। সেখানে মাথা পিছু গড় ঋণের অঙ্ক ৪৮ হাজার ৫৭৮ টাকা। তৃতীয় স্থানে আছে কেরল। তাদের ঋণের অঙ্ক মাথা পিছু ৪৪ হাজার ৩৩৩ টাকা। সার্বিকভাবে রাজ্যে মোট ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে আছে তামিলনাড়ু। সেখানে মোট ঋণ ৩১,৫২০ কোটি টাকা।
কয়েক দিন আগে রাজ্যের অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র (Amit Mitra) দাবি করেছিলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে ছোট শিল্পে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকার। স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি থেকে এই তথ্য এসেছে। ব্যাঙ্কগুলি ওই টাকা ঋণ দিয়েছে শিল্প সংস্থাগুলিকে। অর্থমন্ত্রীর আশা, বছর শেষে সেই অঙ্ক ৭৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, যেখানে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে চায় না, সেখানে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থাগুলির ঋণদানের হার বেশি। কিন্তু অমিত মিত্রের দাবি থেকেই স্পষ্ট, এরাজ্যে যেমন ব্যাঙ্কগুলি ঋণদানে সক্রিয়, তেমনই গ্রামের প্রান্তিক মানুষের কাছে নগদ জোগান বাড়াচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থাগুলি। অর্থাৎ স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসার পথ সুগম রয়েছে সমাজের সর্বস্তরেই।