প্রার্থী নিয়ে তীব্র অসন্তোষ, ক্ষোভের আগুনে নাকাল গেরুয়া শিবির
বঙ্গ বিজেপির(BJP) প্রার্থী তালিকা যত দীর্ঘতর হচ্ছে, ততই ছড়াচ্ছে বিক্ষোভের আগুন। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেতৃত্বের বিড়ম্বনাও। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপির দিল্লির দপ্তর থেকে ঘোষণা হয়েছে ১৫৭ প্রার্থীর নাম। তারপর ক্ষণিকের অপেক্ষা। জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গেল গেরুয়া শিবিরের বিক্ষুব্ধ কর্মীদের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। প্রথমেই আগুন লাগল উত্তরবঙ্গে(North Bengal)। জলপাইগুড়ি জেলা সদর ও মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে এদিন সন্ধ্যায় দফায় দফায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে বিজেপির পার্টি অফিসে। জলপাইগুড়ির জেলা পার্টি অফিসে আগুনও ধরিয়ে দেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। অফিসের ভিতরে টেবিল, চেয়ার ভেঙে ফেলা হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দিলীপ ঘোষের ফ্লেক্সও। জেলা বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যা খুশি তাই করবে, এটা চলবে না।’ তাণ্ডবের একই চিত্র ছিল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরেও। এখানে বিজেপির পার্টি অফিসে স্থানীয় কর্মীরা তাণ্ডব চালান। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর হয়। উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মুর নামে চলতে থাকে ধিক্কার-স্লোগান। বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে টিকিট ‘বিক্রি করেছেন’ সাংসদ। এপ্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল নেত্রী মৌসম নুর বলেন, হরিশ্চন্দ্রপুরে আমাদের লড়াই আরও সহজ হয়ে গেল। রাতের দিকে পুরাতন মালদহের সাহাপুরে দলের মালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের মুখ্য নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা। এদিন প্রায় দু’শো দলীয় কর্মী অফিস ভাঙচুর করেন, অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ দেখান।
প্রার্থী-অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে দক্ষিণবঙ্গেও। দুর্গাপুরে পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অনেক জায়গায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ‘শিক্ষা দিতে’ নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন আদি কর্মীরা। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে দলবদলু জিতেন তেওয়ারিকে প্রার্থী করায় বিজেপির প্রথম সারির নেতারা বিক্ষোভে শামিল হন। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, জিতেন তেওয়ারিকে কিছুতেই মানবেন না। নির্দল প্রার্থী দেবেন। একই চিত্র ছিল কালনাতেও। দলবদলু নেতা বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে কেন প্রার্থী করা হল? এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আদি কর্মীরা। তাঁরা বলেন, বিশ্বজিৎবাবু নিজমুখে তাঁর স্ত্রী ও বউদিকে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। এই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতার জন্য ভোট চাওয়া অসম্ভব।
রানাঘাট (উত্তর-পশ্চিম) কেন্দ্রেও দলবদলু প্রার্থী। তাই তাঁকে মানতে নারাজ বিজেপি কর্মীরা। শহর সহ সভাপতি শান্তনু ঘোষের নেতৃত্বে পার্টি অফিসে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সেখানে দলের পর্যবেক্ষক তথা উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রী সহাদব শামস আটকে পড়েন। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘির চন্দ্রবাটিতে সরাসরি দাবি ওঠে, প্রার্থী বদল করতে হবে। এই জেলার কান্দিতেও টিকিট পেয়েছেন দলবদলু নেতা। তাঁকে নিয়েও আদি বিজেপি কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
এই আঁচ পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা ও শহরতলি এলাকাতেও। জগদ্দলের প্রার্থী নাপসন্দ। তাই এদিন সন্ধ্যায় শ্যামনগরের বাসুদেবপুর মোড়ে তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। পার্টি অফিসের ভিতরে থাকা দলীয় হোর্ডিং ছিঁড়ে বিজেপি কর্মীরা কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের উপর নিয়ে আসেন। সেখানে রাস্তার উপরই হোর্ডিং পোড়ানো হয়। হয় অবরোধও। কল্যাণীর বিজেপির প্রার্থী অম্বিকা রায়কে নিয়েও ছড়ায় বিক্ষোভ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতের সামনে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজ্যের কিষান মোর্চা কমিটির সদস্য ডঃ রনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘অম্বিকা রায়কে কেউ চেনে না। যাঁরা বুক চিতিয়ে রাজনীতি করেছে, তাঁদের অপমান করা হয়েছে।’
বালি আর শিবপুরে গোলমাল তেমন না হলেও চাপা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম না দেখেই বিজেপিতে গিয়েছিলেন জটু লাহিড়ি এবং বিভাস হাজরা। কিন্তু শিবপুরে টিকিট দেওয়া হয়েছে হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ডাঃ রথীন চক্রবর্তীকে। ফলে জটুবাবু এবং বিভাসবাবুর অনুগামীরা আশাহত।