ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে অমর্ত্য সেনের ছবি, ঢেকে দেওয়ার দাওয়াই বিজেপির
ফের বিজেপির রোষানলে বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী বাঙালি অমর্ত্য সেন। বিভিন্ন নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে থাকা তাঁর ছবি ঢাকতে উদ্যোগী বিজেপি। তাদের দাবি, অমর্ত্য সেনের ছবি নাকি ভোটারদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করবে। তাই যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদির ছবি ঢেকে দেওয়া হচ্ছে, সেভাবেই এই খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদেরও ছবি ঢাকতে হবে। আসানসোল রাহা লেন মোড়ে পুরসভার প্রতীক্ষালয়ে থাকা সেই ছবি নিয়ে কমিশনের কাছে বিজেপির অভিযোগ ঘিরে এলাকায় শোরগোল পড়েছে। তবে শুধু অমর্ত্য নয়, আরেক বাঙালি নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ছবি ঢেকে দেওয়ার পক্ষপাতী বিজেপি। বিশ্বের দরবারে বাংলাকে গর্বিত করা মানুষজনের ছবি বিজেপি এভাবে ঢেকে দিতে উদ্যোগী হতেই সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি শিক্ষামহলও বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ।
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির সঙ্গে বিশ্বখ্যাত বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের তিক্ত সম্পর্ক কারও অজানা নয়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে এই বাঙালিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অর্মত্য সেনকে একাধিকবার আক্রমণ করে বাঙালির ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নোবেলজয়ীর বাড়ির জমি বিবাদেও অনেকে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনের দাবি তুলেছেন। এবার বিতর্ক খনি শহরে। আসানসোল পুরসভার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতীক্ষালয় রয়েছে রাহা লেন মোড়ে। সেখানে পাঁচ বাঙালি নোবেল জয়ীর ছবি সহ তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখা রয়েছে। সেখানে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিভি রমন, মাদার টেরিজা, অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও তৎকালীন পুরসভার মেয়রের নামও ছিল। কিন্তু নির্বাচনী বিধি লাগু হতেই মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজনৈতিক নেতাদের মুখ ঢেকে দেয় কমিশন। রাজনৈতিক সংসর্গ না থাকা পাঁচ নোবেল জয়ী বাঙালির ছবি ঢাকার প্রয়োজন মনে করেনি কমিশন। কিন্তু একেই নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হিসাবে দেখছে বিজেপি। বিজেপির দাবি, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের বিষয় আলাদা। কিন্তু যাঁরা জীবিত রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তাঁদের কথা ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ভোটের আগে তাঁদের ছবিও রাজনৈতিকভাবে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই ছবি ঢেকে দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে।
বিজেপি জেলা সহসভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, অমর্ত্য সেন নানা সময়ে এমন মন্তব্য করেন, যা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। তাই তাঁর ছবি মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে বলেই ওই ছবি ঢাকতে বলা হয়েছে। আমরা চাই না এভাবে যাঁরা জীবিত রয়েছেন, তাঁদের ছবি প্রকাশ্যে থাকুক। সেই হিসাবে আমরা চাইব অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ছবি ঢাকা হোক।
অতিরিক্ত জেলশাসক অভিজিৎ শেভালে বলেন, বিজেপি অর্মত্য সেনের ছবি ঢেকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আমরা সমস্ত ব্যাপারটা খতিয়ে দেখব।
এরপরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আসানসোল বিসি কলেজের অধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, উনি পৃথিবীর এক সম্পদ। তাই এটা ঠিক হচ্ছে না। দুর্গাপুরের জাতীয় শিক্ষক সুশীল ভট্টাচার্য বলেন, অমর্ত্য সেন আমাদের অহঙ্কার, এটা অত্যন্ত অনৈতিক দাবি।
সিপিএম জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, শিক্ষার অভাব বিজেপির মধ্যে প্রবল। ফ্যাসিস্ট শক্তি সব সময়ের শিক্ষার বিরুদ্ধে, ওরাও তাই। আসানসোল পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান অমর চট্টোপাধ্যায় বলেন, সমগ্র বাঙালির এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা উচিত।