বিজেপির কথায় চলছে কমিশন? সরানো হল ১১২ পুর প্রশাসককে
ভেঙে দিতে হবে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার মাথায় থাকা বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স অর্থাৎ প্রশাসক বোর্ড। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সেখানে রাখা চলবে না। বসাতে হবে সরকারি প্রতিনিধি। বিজেপি সহ বিরোধীদের এই দাবি শনিবার মেনে নিল নির্বাচন কমিশন। জারি করা হল এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা। যার জেরে রাজ্যের ১১২টি পুরসভায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত প্রশাসক বোর্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন সংক্রান্ত আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন এই নির্দেশিকা বহাল থাকবে। যদিও এদিন বিকেলেই কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
করোনাকালে নির্বাচন (Bengal Election 2021) করা যায়নি। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের ১২৫টি পুরসভার মধ্যে ১১২টি মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার মাথায় প্রশাসক বোর্ড বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন। বোর্ডের মাথায় বসানো হয় সংশ্লিষ্ট পুরসভার মেয়র বা চেয়ারম্যানকে। অন্যান্য মেয়র পারিষদ বা চেয়ারম্যান পারিষদকেও সেখানে জায়গা দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের দাবি, যা হয়েছে, সবটাই আইন মেনে। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় বাম এবং বিজেপি।
এ সবের মধ্যেই ঘোষণা হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল বাম-কং-বিজেপি নেতৃত্ব। অবিলম্বে সমস্ত প্রশাসক বোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য তদ্বির করেছিলেন তাঁরা। বিরোধীদের এই অভিযোগের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশনের নির্দেশ, কোনও পুরসভার মাথায় রাজনৈতিক ব্যক্তি সম্বলিত প্রশাসক বোর্ড রাখা চলবে না। ২২ মার্চ অর্থাৎ আগামী কাল সোমবার সকাল দশটার মধ্যে সেগুলি ভেঙে দিতে হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব এবং কর্মিবর্গ দপ্তরের প্রধান সচিবকে নিয়ে তৈরি একটি কমিটি সেই জায়গায় সরকারি আধিকারিকদের নিয়োগ করবে।
স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে খুশি বিজেপি (BJP)। এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে একশোর বেশি কর্পোরেশন এবং পুরসভায় ভোট করায়নি রাজ্য সরকার। রাজ্যবাসী নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা অভিযোগ করেছিলাম। বেআইনিভাবে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা এই পুরসভা কিংবা কর্পোরেশনের মাথায় বসে ভোটকে প্রভাবিত করছেন। সেই কারণে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিল।
কমিশনের (Election Commission) এই সিদ্ধান্তকে অবশ্য কটাক্ষই করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন বিজেপির হাতের পুতুল। ওরা যা বলছে, সেটাই করছে। আমাদের কোনও কথাই শুনছে না। এমন নির্বাচন কমিশন জীবনে দেখিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, বিজেপি যা বলছে, তা-ই কার্যত হচ্ছে। দৃশ্যতই দেখা যাচ্ছে, বিজেপি যে দাবিগুলি জানাচ্ছে, পরবর্তী কালে কমিশন সেটাই করছে। তাই কমিশনের স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।