দলবদলু প্রার্থীর মুখে ‘দুর্নীতি’র কথা শুনে বিদ্রুপ বিজেপি কর্মীদের
তৃণমূল কংগ্রেস(TMC) ছেড়ে বিজেপিতে(BJP) গিয়েই মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন গৌরচন্দ্র মণ্ডল(Gourchandra Mondal)। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করে তিনি ‘দুর্নীতি বিরোধী’ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন। ‘সোনার বাংলা’ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভোটারদের। আর এই বক্তব্যের পরই আদি বিজেপি কর্মীদের ট্রোলের শিকার হচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা গৌরবাবুর ‘দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ের ডাক’কে তীব্র কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনে গৌরবাবুর বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসা হবে না বলেও আরও একবার জানিয়েছেন আদি বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
উল্লেখ্য, ৮ মার্চ বিজেপিতে যোগ দিয়েই ১৮ তারিখ মানিকচক কেন্দ্রের প্রার্থীপদ পান গৌরবাবু। এনিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আদি বিজেপি কর্মীরা। মানিকচক পার্টি অফিসের পাশাপাশি জেলা কার্যালয়েও বিক্ষোভ দেখান গৌর-বিরোধীরা। কিন্তু সেসব বিরোধিতাকে আমল না দিয়ে শনিবার থেকেই নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েছেন গৌরবাবু। রক্ষাকালীর মন্দিরে পুজো দিয়ে মিছিল করে প্রচার শুরু করেন।
সংবাদমাধ্যমকে গৌরবাবু বলেন, আমি মানিকচকের ভূমিপুত্র। রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছি। বিজেপির নেতা-কর্মী-সমর্থক সকলেই আমার পাশে রয়েছেন। দুর্নীতিমুক্ত বাংলা গড়তেই বিজেপির সৈনিক হিসেবে ময়দানে নেমেছি। জয়ী হয়ে দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়াই আমাদের লক্ষ্য। মোদিজির স্বপ্ন পূরণ করবে মানিকচকের মানুষ। তাঁর এই বক্তব্যের পরই গৌরবাবুর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য ভেসে আসতে থাকে বিজেপির অন্দরমহল থেকেই। সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন আদ্যন্ত গৌর-বিরোধী বিজেপি নেতা অনিলচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বলেন, গৌরবাবু তৃণমূলের মতো একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দলের অন্যতম মুখ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট, গৌরবাবু সরাসরি দুর্নীতির মদতদাতা। তাঁর মুখে দুর্নীতি বিরোধিতার কথা শুনে আমাদের ‘বিড়াল তপস্বী’র কথা মনে পড়ছে। তিনি জেলা পরিষদের ভোটেও জিতেছিলেন দুর্নীতি করেই। সুতরাং এমন একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এখন দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ের কথা বলছেন শুনে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরবাবুর বক্তব্য, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।
একইভাবে ডালিম মণ্ডল, সঞ্জয় ঘোষ সহ বিজেপি কর্মীরাও সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপি দুর্নীতির সঙ্গে কখনও আপস করে না। কিন্তু যাঁরা তৃণমুলের দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের মুখে দুর্নীতি বিরোধিতার কথা হাস্যকর।
শুধু দুর্নীতি নিয়েই নয়, গৌরবাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে তীব্র অভিমানও রয়েছে আদি-বিজেপি নেতা-কর্মীদের। মানিকচকের প্রথম সারির বিজেপি নেতা অভিজিৎ মিশ্র বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনে জোর করে বিজেপিকে হারিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করে বুকে লাথি খেয়েছি। যাঁদের প্ররোচনায় ও নেতৃত্বে বিজেপির হয়ে লড়াই করতে গিয়ে মার খেয়েছি, তাঁরাই আজ দলের নেতা হয়ে বসেছেন। অনিলবাবু বলেন, তৃণমূল থেকে প্রস্তাব এসেছিল যোগ দেওয়ার। কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, বিজেপি ছাড়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। প্রয়োজনে নির্দল হয়ে লড়ব। আশা করি দলের নেতৃত্ব আমাদের আবেগের মর্যাদা দেবে। দলের মধ্যেই প্রবল বিদ্রোহ চাপা দেওয়ার চেষ্টায় অবশ্য নেমে পড়েছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। জেলা কমিটির অন্যতম সহ সভাপতি তথা মুখপাত্র অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমাদের দলের কর্মীরাই আমাদের সম্পদ। তাঁদের আবেগ, অভিমান সবকিছুই দলকে ঘিরে। কিন্তু এখন আমাদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য হল, রাজ্যের দুঃস্বপ্নের সরকারকে উৎখাত করে সোনার ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত করা। আমাদের বিশ্বাস, ব্যক্তিগত অভিমান ভুলে দলের স্বার্থেই কোনও ব্যক্তি নয়, দলকে জেতাতে সকলেই শেষপর্যন্ত ময়দানে নেমে পড়বেন।
তৃণমূলের অন্যতম জেলা কোঅর্ডিনেটর দুলাল সরকার বলেন, বিজেপির অভ্যন্তরীণ লড়াই তাদের নিজস্ব সমস্যা। তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। আমরা কাউকে দলে আমন্ত্রণ করে আনব না। যেসব বিজেপি কর্মীরা বিশ্বাস করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই, তাঁরা স্বেচ্ছাতেই তৃণমূলে যোগ দেবেন।এই মুহূর্তে