উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

প্রচারে নামতেই কটাক্ষ, জর্জরিত দলবদলু শঙ্কর

March 22, 2021 | 2 min read

রবিবার সাতসকালে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে হঠাৎই পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের(Gautam Deb) বাড়িতে হাজির হন শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি(BJP) প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ(Shankar Ghosh)। গৌতম দেব ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হলেও তিনি শিলিগুড়ি কেন্দ্রের ভোটার। কিন্তু শঙ্করবাবুর এদিনের প্রচার সূচিতে পর্যটনমন্ত্রী বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল না। ভোটের প্রচারে চমক দিতে পর্যটনমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কিন্তু কার্যত ‘দলবদলু’ হিসেবে কটাক্ষ শুনতে হল। যা নিয়ে তাঁর নতুন দলের অন্দরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। 


কিছুদিন আগে সিপিএম থেকে বিজেপিতে এসেই বিধানসভা ভোটের টিকিট পেয়েছেন শঙ্কর ঘোষ। এ নিয়ে জেলা বিজেপির নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ ক্ষোভে ফুঁসছেন। অনেকে সরাসরি বিদ্রোহও করেছেন। ঘরে-বাইরে সর্বত্র দলবদলু হিসেবে তাঁকে কটাক্ষবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে। এবার সৌজন্যের মোড়কে পর্যটনমন্ত্রীও তাঁকে ঘুরিয়ে দলবদলু হিসেবে সমালোচনা করলেন। বিজেপি প্রার্থীর সাক্ষাৎ করা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে গৌতমবাবু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, আমি বলেছি নবরূপে দেখছি তোমায়। ৩০ বছর বামপন্থী ভাবধারায় থাকার পর এখন একেবারেই তার বিপরীত রাজনৈতিক ভাবধারায় নিজেকে যুক্ত করেছে। পর্যটনমন্ত্রীর এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে আসার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির জেলাস্তরের এক নেতা বলেন, সারা রাজ্যে বিজেপির অন্যতম চ্যালেঞ্জ তৃণমূল। সেখানে এদিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়া পর্যটনমন্ত্রীর বাড়ি যাওয়া শঙ্কর ঘোষের ঠিক হয়নি। কারণ, পর্যটনমন্ত্রীর যে প্রতিক্রিয়া জানতে পেরেছি তাতে এদিন শঙ্কর ঘোষ নিজেই গাল পেতে চর খেলেন। কমিউনিস্ট নীতি আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে রাতারাতি তাঁর বিজেপির নামাবলি গায়ে জড়িয়ে নেওয়া নিয়ে ঘরে-বাইরে, সর্বত্রই নানা ধরনের গুঞ্জন বেড়েই চলেছে। শঙ্করবাবু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে এদিন পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর চোখেমুখে কিছুটা অস্বস্তি দেখা গিয়েছে। 


যদিও শঙ্করবাবু পরে বলেন, পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবু আমাকে অনেকদিন থেকেই চেনেন। আমিও ওঁকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি। দু’জনেই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই রাজনীতিতে উঠে এসেছি। সেই পূর্ব পরিচিতির সূত্র ধরেই এদিন পর্যটনমন্ত্রীর বাড়িতে সৌজন্য সাক্ষাৎকারের জন্য যাই। তবে এদিন রাজনীতি নিয়ে আমাদের দু’জনের মধ্যে কোনওরকম কথাবার্তা হয়নি। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে। অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, লড়াই কঠিন বুঝে শঙ্কর ঘোষ কি এখন অশোক ভট্টাচার্যকে হারানোর জন্য তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সহানুভূতি এভাবে চমক দিয়ে আদায় করতে চাইছেন? 


এদিকে এদিনের প্রচারে নাম না করে অশোক ভট্টাচার্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আরএকবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন শঙ্কর ঘোষ। বাজারে ভোটপ্রচারে গিয়ে শঙ্করবাবু ব্যবসায়ীদের বলেন, শিলিগুড়ির উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রে-রাজ্যে আর চিঠি চাপাটির কথা শুনতে হবে না। চিঠিচাপাটি করে উন্নয়ন হয় না। অশোকবাবু গত পাঁচবছর শিলিগুড়ির বিধায়ক এবং পুরসভার মেয়র হিসেবে উন্নয়নের কাজ সেভাবে করতে পারেননি। রাজ্য সরকারে বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগে চিঠিচাপাটিই করে গিয়েছেন। এই দিকটি তুলে ধরার জন্য শঙ্কর ঘোষের ওই বক্তব্য। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি পরোক্ষভাবে দলের দার্জিলিংয়ের এমপি তথা বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র রাজু বিস্তাকেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। 
বিরোধীদের অভিযোগ, কাজ না করে এলাকায় না থেকে রাজু বিস্তা শুধু দিল্লিতে কবে কোথায় কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, প্রস্তাব দিয়েছেন, তা দিনের পর দিন তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে চিঠিই প্রচার করেন। কাজেই এদিন অশোক ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করতে গিয়ে শঙ্করবাবু তাঁর নতুন দলের এমপিকে নিয়ে বিরোধীদের  অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছেন বলে দলের একাংশ মনে করছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#siliguri, #Gautam Deb, #shankar ghosh, #west bengal elections2021

আরো দেখুন