জোটে জট, ৪ কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের লড়াই
কংগ্রেসের(Congress) জন্য সংযুক্ত মোর্চার সার্বিক ঐক্য যে অধরা হতে চলেছে তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে অন্তত তিনটি কেন্দ্রে তথাকথিত ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াইয়ের ইঙ্গিতে। পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি (Baghmundi)ও জয়পুর(Joypur) এবং মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ কেন্দ্রে বাম(Left) ও কংগ্রেস পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও চতুর্থ আসন হিসেবে নদীয়ার শান্তিপুর কেন্দ্রেও এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেখানে কংগ্রেস অধীর ঘনিষ্ঠ ঋজু ঘোষালকে প্রার্থী করেছে। প্রার্থী না দিলেও এই কেন্দ্রেও সিপিএম লড়বে বলে আগেই জানিয়েছে। এই অবস্থায় জোট জটিলতা আরও একধাপ এগিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির একক নির্বাচনী প্রচারের কর্মসূচিকে ঘিরে। শনিবার পুরুলিয়া এবং রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে কপ্টারে চেপে একাধিক নির্বাচনী জনসভা করেছেন অধীর। তার সব ক’টি ছিল কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে। তার থেকেও বড় কথা, তাঁর এই সভাগুলিতে মোর্চার অন্যতম শরিক হিসেবে বামেরা কোনও আমন্ত্রণই পায়নি। একইভাবে ওই দুই জেলায় বাম নেতাদের জনসভায় জেলা নেতৃত্বকে বার্তা পাঠালেও কংগ্রেসের তরফে কেউ হাজির থাকেননি এই দু’দিনে। তৃতীয় শরিক আইএসএফ-এর সঙ্গে শুরু থেকেই গোলমাল তৈরি হওয়ায় তাদের ডাকার প্রশ্নই ওঠেনি প্রত্যাশিতভাবে। দুয়ারে ভোট এলেও সব মিলিয়ে মোর্চার অন্দরের এহেন অস্বস্তির ছবি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে কেবল মোর্চার অন্দরেই নয়, কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা নিয়েও এবার দলের ভিতরেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তার অন্যতম উদাহরণ ভবানীপুর কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে দলের প্রাথমিক তালিকায় অগ্রাধিকারী প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের নাম ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাদাব খানকে সেখানে টিকিট দেওয়ায় কার্যত বিদ্রোহ করে বসেছেন প্রদীপ। রবিবার তিনি রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নিজের ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। কেন্দ্রে ৮টি ওয়ার্ডের তাঁর অনুগামী কর্মীদের নিয়ে তিনি এদিন বৈঠকও করেন। শুধু তাই নয়, সোনিয়া, রাহুল, অধীর, জিতিন প্রসাদ সহ দলের হাইকমান্ড ও রাজ্য নেতৃত্বকে মেল করে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি এব্যাপারে। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভবানীপুরে ‘বহিরাগত’ সাদাব খানের জায়গায় অন্য প্রার্থীর কথা দল বিবেচনা না করলে তিনি কোনও বিকল্প সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেই বিকল্প অন্য কোনও দলে যাওয়া কি না তা অবশ্য এদিন স্পষ্ট করেনি প্রদীপ। প্রসঙ্গত, সাদাব নিজেও ভবানীপুরের টিকিট পেয়ে খানিকটা হতাশ। এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁর প্রথম পছন্দের কেন্দ্র ছিল জোড়াসাঁকো। পাশাপাশি তিনি নদীয়া, হাওড়া, মুর্শিদাবাদের কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রর নামও জানিয়েছিলেন নেতৃত্বকে।
একইভাবে নদীয়ার কালীগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী আবদুল কাশেমকে নিয়েও দলীয় অনৈক্যের ছবি ধরা পড়েছে এদিন। কাশেমের বিরোধী গোষ্ঠীর সমর্থকরা এদিন প্রার্থী বদলের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়ে মিছিলও করে। নদীয়ার শান্তিপুরে কংগ্রেস কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে কিছু না করলেও ‘বহিরাগত’ ঋজুকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের ভোটেও দল বহিরাগত অরিন্দম ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছিল। তবু জোটের স্বার্থে সেবার তাঁরা তা মেনে নিয়ে কাজ করেছিলেন। অরিন্দম সেবার জিতেওছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তৃণমূলে ভিড়ে যান। সম্প্রতি আবার বিজেপিতে গিয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁরা স্থানীয় প্রার্থীই চেয়েছিলেন। কিন্তু এলাকার কর্মীদের সেই আবেগকে নেতৃত্ব মর্যাদা দেয়নি বলে তাঁদের অনুযোগ। উল্লেখ্য, এর আগে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী বদলের দাবিতে জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ঘেরাও করে দিনভর বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সেখানকার বেশ কিছু দলীয় কর্মী।