সিংহভাগ আসনেই গোঁজ প্রার্থী দেবে আদি বিজেপি
ভোটের মুখে হঠাৎ ‘দমবন্ধ’ হয়ে আসা তৃণমূল (TMC) নেতাদের দলে নিয়ে ‘অক্সিজেন’ পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর সেই ‘দলবদলু’দের রাতারাতি টিকিট বিলিয়ে বিজেপি(BJP) নেতৃত্ব এখন চরম বিপাকে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা গর্জে উঠেছেন। জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। চলছে হিংসাও। ভাঙচুর, আগুন, অবরোধ। দলীয় অফিসের ঝাঁপ নামিয়ে তালা ঝোলাচ্ছেন দলেরই কর্মীরা! প্রার্থী নিয়ে দিকে দিকে ক্ষোভের পাহাড় জমছে। সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ হিসেবে এবার সিংহভাগ আসনে নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আদি বিজেপি নেতারা। খোদ কলকাতার বুকে চলছে গোপন বৈঠক। দু’-চার দিনের মধ্যে তাঁরা সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন। এই ‘দলীয় গোঁজ’ নিয়ে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে। ড্যামেজ কন্ট্রোলে মাঠে নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে। কিন্তু, তাতেও বরফ গলেনি।
বিধানসভা নির্বাচন এবার আট দফার। ধাপে ধাপে দিল্লি থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। প্রার্থী তালিকা যত লম্বা হয়েছে, ততই ছড়িয়েছে বিক্ষোভের আগুন। অনেক বিধানসভা কেন্দ্রে অবশ্য প্রকাশ্যে তেমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা যায়নি। সেই এলাকাগুলিকে এখন ‘ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি’ বলেই মনে করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় গত ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় কলকাতায় একটি গোপন বৈঠক করেন বিভিন্ন জেলার দেড়শোর বেশি কেন্দ্রের আদি বিজেপি নেতারা। কয়েকজন রাজ্যস্তরের নেতাও সেখানে হাজির ছিলেন। বৈঠকে প্রায় ১৫৫টি আসনে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও জানানো হয়। এমনকী, বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দিল্লিতে পাঠিয়েছেন আদি নেতারা।
জানা গিয়েছে, এর জেরেই রাতারাতি এ রাজ্যে পা রেখেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। শনিবার এবং রবিবার আদি নেতাদের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করেন। কিন্তু, কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি। ইতিমধ্যে পুরুলিয়ার জয়পুর, বলরামপুর, পাড়া, বাকুঁড়ার বিষ্ণপুর, ছাতনা, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি উত্তর এবং হুগলির পুরশুড়া আসনে আদি বিজেপিরা নির্দল হয়েই মনোনয়নপত্র জমা করে দিয়েছেন। চতুর্থ থেকে অষ্টম দফার ভোটের মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য এখনও হাতে সময় রয়েছে। তাই এই দফাগুলিতে নির্দলের ভিড় বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
এদিকে আজ, সোমবার বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্যা কৃষ্ণা ভট্টাচার্য হুগলির উত্তরপাড়া আসনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। অন্যান্য জেলাতেও আদিরা ‘গোঁজ’ হতে কোমর বাঁধছেন। দু’-চারদিনের মধ্যেই প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানানোর কথা ভাবছেন তাঁরা।
কিন্তু, দলের বিরুদ্ধে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত কেন? ১৯ মার্চের বৈঠকে থাকা বিজেপির এক রাজ্য কমিটির নেতার দাবি, আমরা ২৬০ জনের প্রার্থী তালিকা দেখেছি। সেখানে মাত্র ২০ জন পুরনো বিজেপি নেতাকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। বাকি সবই তৃণমূল এবং অভিনেতা-অভিনেত্রী। যাঁরা এতদিন ঘাম-রক্ত ঝরিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে এল, সেই আদি বিজেপিরা ঢাকা পড়ে গেল ফেসিয়াল করা মুখের আড়ালে! অথচ, দুর্দিনে এই নেতা-কর্মীরাই পদ্মফুলের ঝান্ডা নিয়ে হেঁটেছিলেন। এখন যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, সেই বিজেপিকে আমরাই চিনি না। তাই দেড়শোর বেশি আসনে নির্দলে দাঁড়াব বলে ঠিক করেছি। মানুষ আমাদের পুরানো কর্মীদের চেনেন। তাঁরাই বিচার করবেন।