বাংলায় তৃণমূলের হয়ে প্রচার নামতে তৈরি ২ মুখ্যমন্ত্রী
আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিলেন ২ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ডাক এলে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে চান বলে জানিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন (Hemant Soren)।
শুধু একটা ডাকের অপেক্ষা। তাহলেই দিল্লির ‘ভাইয়া’ তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন দিদিকে ক্ষমতায় ফেরাতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণ পেলেই বাংলার নির্বাচনে (Bengal Election 2021) তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে দিল্লি থেকে ১৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কলকাতায় পৌঁছে যাবেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা (Arvind Kejriwal)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তথা তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামতে তৈরি কেজরিওয়াল ছাড়াও আম আদমি পার্টির নেতা মণীশ সিসোদিয়া-সহ অন্য নেতারা। এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনও। তিনিও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে চান বলে জানিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরবিন্দ কেজরিওয়াল জাতীয় রাজনীতির নয়া ‘তৃতীয় মোর্চা’-র অন্যতম জনপ্রিয় দুই মুখ। বার বার নানা ইস্যুতে যাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কখনও কলকাতায় মমতার মঞ্চে উপস্থিত থাকতে ছুটে গিয়েছেন কেজরিওয়াল। গত বছর শেষের দিকে আইপিএস অফিসারদের বদলি ইস্যুতে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকেছেন। আবার মমতাও কেজরিওয়ালের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন বার বার।
সম্প্রতি যেমন এনসিটি সংশোধিত বিল এনে দিল্লির রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন কেজরিওয়ালরা। অভিযোগ করা হয় লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মাধ্যমে বকলমে দিল্লির শাসন ক্ষমতা নিজেদের হাতে রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভও দেখান আম আদমি পার্টির নেতারা। এই ইস্যুতে কেজরিওয়াল সরকারের পাশে থেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিবাদ করে দিন তিনেক আগেই চিঠিও লিখেছেন তিনি।
অতীতে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যেই নিজেকে মমতা দিদির ‘ভাইয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন কেজরিওয়াল। সেই ‘দিদি’-র পাশে দাঁড়াতে এবার এক পায়ে খাড়া আম আদমি পার্টির নেতারা। অপেক্ষা করছেন ‘দিদি’-র একটা ডাক একটা ফোনের।
হেমন্ত সোরেনের দল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (JMM) প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। জঙ্গলমহলের আদিবাসী ভোটারদের লক্ষ্য করে এ রাজ্যে খাতা খোলার কথা ভাবে জেএমএম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় হেমন্ত সোরেনকে নিরস্ত করেন। পালটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়খণ্ডে বাঙালী ভোটারদের কথা তোলেন। তার পর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসেন হেমন্ত সোরেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বার্তাই দেন। এবার তিনিও পশ্চিমবঙ্গে ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের হয়ে ভোট প্রচারের আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে দিল্লি ছাড়াও দেশের একাধিক এলাকার বিভিন্ন স্তরের ভোটে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে আম আদমি পার্টি। কোথাও কোথাও কিছু আসনও জিতেছে। নতুন প্রজন্মের ভোটাররা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসনের আশায় কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেয়নি আম আদমি পার্টি।
সম্প্রতি এর কারণও ব্যাখ্যা করেন আপ-এর এক মুখপাত্র। তিনি বললেন, “বাংলায় মমতা দিদি আছেন। উনি যেভাবে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। আমরা সেখানে তাঁর পথে বাধা তৈরি করতে চাই না। বরং যেভাবে উনি উন্নয়ন করছেন, আমরা তাঁর পাশে থাকতে চাই।” আপ-এর রাজ্যসভা সাংসদ তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র সঞ্জয় সিংয়ের বক্তব্য, “বিজেপির মতো স্বৈরাচারী শক্তির বিরুদ্ধে দেশের মধ্যে কেজরিওয়ালজি আর দিদিই তো শুধু লড়াই করছেন। নৈতিকভাবে আমরা ওঁর সঙ্গে আছি।” আর প্রচার? সঞ্জয় সিং বললেন, “দিদি যদি মনে করেন আমাদের বাংলায় যাওয়া দরকার, ওঁর এক ডাকে মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী-সহ আমাদের সবাই তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রচার করতে বাংলায় ছুটে যাবেন।”