বনগাঁয় নির্দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা বিক্ষুব্ধদের, বিপাকে বিজেপি
দফায় দফায় প্রার্থী ঘোষণার পরেই চরম সমস্যায় পড়েছে গেরুয়াশিবির। প্রার্থীতালিকা নিয়ে দলের অন্দরেই দানা বেঁধেছে অসন্তোষ। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এখনও বিক্ষোভরত বিজেপির (BJP) কর্মী-সমর্থকেরা। এবার তার ব্যতিক্রম হল না বনগাঁও। দীর্ঘ টানাপোড়েন ও হিসেবনিকেশের পর বনগাঁর মহকুমার তিন বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাতে সমস্যা মেটার পরিবর্তে ক্ষোভের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। গাইঘাটার আদি বিজেপি কর্মীরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের ঘোষিত প্রার্থীর কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ সহ বুধবার নানান কর্মসূচি করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রেও প্রার্থী নিয়ে এদিন ক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পদ্ম-নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রের অনুযায়ী, বিজেপির দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার সময় গাইঘাটা, বনগাঁ উত্তর ও বাগদা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। মঙ্গলবার সকালে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর ক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, গাইঘাটা কেন্দ্রে সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাদা সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু এই কেন্দ্রের আদি বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে শান্তনুবাবুদের সম্পর্ক আগে থেকেই তলানিতে ঠেকেছিল। শান্তনুবাবুর দাবিমতো মাস দেড়েক আগে বিজেপির তরফে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৈরি করা হয়। সেখানে শান্তনুবাবুর অনুগত জেলা সভাপতি বসানো হয়েছে। এরপর শান্তনুবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত সিংহভাগ দুর্দিনের বিজেপি নেতাকে কার্যত ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এনিয়ে রাজ্যে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। গাইঘাটায় বিজেপির বিভাজন প্রার্থী ঘোষণার পর ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে।
এদিন এই বিধানসভা কেন্দ্রের সুঁটিয়া, গোবরডাঙা, পাঁচপোতা, সংহতি সহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০ জন বিজেপি নেতা দমদম এয়ারপোর্ট লাগোয়া এক বিজেপি নেতার বাড়িতে বৈঠকে বসেন। সেখানে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন কোনওভাবেই সুব্রতবাবুকে তাঁরা প্রার্থী হিসেবে মানবেন না। তাই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার পাঁচপোতা এলাকায় কয়েকশো বিজেপি কর্মীকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, এদিন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে অভীক বসাক সহ কিছু বিজেপি কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, কোনওভাবেই আমরা এখানকার বিজেপি প্রার্থীকে মেনে নেব না। বিশ্বজিৎবাবুকেই প্রার্থী চাই। দুলাল বরকে প্রার্থী না-করায় বাগদাতেও তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। যদিও বিশ্বজিৎবাবু ও দুলালবাবু দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির গাইঘাটা-১ পূর্ব মণ্ডলের সহ-সভাপতি বাবলু দাস বলেন, “আমি নিজে মতুয়া বাড়ির ছেলে। আমি চাই আমাদের ঠাকুরবাড়ি রাজনীতিমুক্ত হোক। মতুয়ারা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল করুক। কেন ঠাকুরবাড়ি থেকে রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ও মতুয়াদের সেই দলে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হবে। তাই আমরা ঠাকুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, আমরা প্রার্থী হতে দলের কাছে দরবার করেছি এমন নয়। কিন্তু দল যাঁকে প্রার্থী করেছে তাঁকেই বিজেপি কর্মী হিসেবে আমাদের মেনে নিতে হবে।”