মাটিগাড়ায় প্রচারে ব্যাপক সাড়া নলিনীর
এ যেন উলট পুরাণ! রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির ঝাণ্ডা ধরে ভোটের ময়দানে নামছেন নেতারা। অনেকে সরাসরি পদ্মের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করছেন। সেখানে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন নলিনীরঞ্জন রায়। তিনি নির্বাচনী কেন্দ্র চষে বেড়াচ্ছেন। এতে কার্যত বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব তৃণমূল প্রার্থীকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে এখানে ভোটযুদ্ধের ময়দান সরগরম হয়ে উঠেছে।
রাজ্যের কোচবিহার, মালদহ, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল ছেড়ে পদ্মের ঝাণ্ডা তুলে নিয়েছেন নেতাদের একাংশ। এবার বিধানসভা ভোটের ময়দানে তাঁদের কেউ কেউ বিজেপির প্রার্থীও হয়েছেন। তাঁরা সর্বক্ষণ গেরুয়া শিবিরের পক্ষে সওয়াল করছেন। এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রায় একমাস আগে শিলিগুড়িতে বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূলের ঝাণ্ডা তুলে নিয়েছেন নলিনীরঞ্জন রায়। শুধু তাই নয়, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করে রীতিমতো চমক দিয়েছে ঘাসফুল শিবির।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ফাঁসিদেওয়ায় নলিনীরঞ্জনবাবুর আসল বাড়ি। বর্তমানে তিনি মাটিগাড়ার একটি উপনগরীতে থাকেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি নেভিতে কর্মরত ছিলেন। তারপর সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্টের অফিসার পদে যোগ দেন। এ জন্য তিনি ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন সেই চাকরি করার পর ক্যাপ্টেন একটি রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বিজেপির উত্তরবঙ্গের ইনটেলেকচুয়াল সেলের সঙ্গে যুক্ত হন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজেপি ত্যাগ করে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের হাত ধরে তৃণমূলে শামিল হন। প্রার্থী বলেন, বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। ওদের দলের পরিবেশ ভালো লাগেনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বস্তরের মানুষের কথা ভাবেন। তিনি উন্নয়ন করছেন। তাই তৃণমূলে শামিল হয়েছি।
তৃণমূলের এই প্রাক্তন সেনা আধিকারিক প্রার্থী ভোটের ময়দানে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। যেমন নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে তিনি প্রচার করছেন। তেমনি পদযাত্রা, কর্মিসভা, পাড়া বৈঠক, বাড়ি বাড়ি যাওয়ার মাধ্যমে আমআদমিকে আপন করে নিচ্ছেন। তৃণমূল প্রার্থী বলেন, এখানে দলের সংগঠন যথেষ্ট মজবুত। তাই ভোট প্রচারে সমস্যা হচ্ছে না। প্রচারে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা খগেশ্বর রায় বলেন, এখানে বিজেপির কিছুই নেই। ওদের নেতারা মুখে বড় বড় কথা বললেও বাস্তবে কিছু করছে না। আর ১০ বছর ধরে এই কেন্দ্র দখলে রেখেছেন কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। তাঁকে মানুষ খুঁজে পাননি। তাই দলীয় সংগঠন, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন ও প্রার্থীর ইমেজের জেরেই এখানে এবার তৃণমূলের ফল ভালো হবে।
গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ব্যাপক ফল করলেও এবার এখানে ‘উলট পুরাণের’ রাজনীতি বিজেপিকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। যদিও বিজেপি প্রার্থী আনন্দময় বর্মন মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। তিনি পদযাত্রা, মিছিলের পাশাপাশি ডিজিটাল স্ক্রিনযুক্ত ট্যাবল ময়দানে নামিয়েছেন। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিজেপির প্রার্থী বলেন, এখানকার তৃণমূল প্রার্থী সামান্য কিছুদিন বিজেপিতে ছিলেন। তাছাড়া তাঁর সঙ্গে জনগণ নেই। কাজেই ওই প্রার্থী গুরুত্বহীন। আর কংগ্রেস প্রার্থী হলেন ‘ডুমুরের ফুল’। তাই এবার এখানকার জনতা পদ্মের সঙ্গেই থাকবেন। এদিকে, এই কেন্দ্র ধরে রাখতে আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকার। তিনি বলেন, তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। এখানকার জন্য আমি কী করেছি, তা স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন। তাই এবারও এখানকার মানুষ কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে বলেই আশা করছি।