দেশ বিভাগে ফিরে যান

ডবল ইঞ্জিনে স্বপ্নভঙ্গ অসমে

March 26, 2021 | 2 min read

ডবল ইঞ্জিন(Double Engine) চলছে…! খোলেনি অসমের(Assam) দু’টি কাগজ কল! ৩ হাজার ৬০০ শ্রমিক কর্মহীন। আত্মঘাতী ৮২ জন। বিজেপি(BJP) বিরোধী জোট বেঁধে ‘দুয়ারে শ্রমিক’ কর্মসূচি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা বলছেন প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথা! 


ডবল ইঞ্জিন চলছে…! চাকরি হয়নি দু’কোটি যুবক-যুবতীর। উল্টে এক কোটিরও বেশি লোক কর্মহীন। নতুন কোনও শিল্পের মুখ দেখেনি অসম। চরম দুর্দশায় চা শ্রমিকরা। গুয়াহাটি বিমানবন্দর উঠেছে আদানিদের হাতে। অভিযোগ আম-অসমিয়াদের।  


ডবল ইঞ্জিন চলছে…! আছড়ে পড়েছে এনআরসি’র ভয়ঙ্কর অভিঘাত! ১৯ লক্ষেরও বেশি বাঙালি অস্তিত্ব সঙ্কটে। চরম দুর্বিসহ অবস্থায় দিন কাটছে তাঁদের। মৃত্যু বাড়ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। 


বাংলা দখলেও এবার ‘ডবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব। সোনার বাংলা গড়ার আশ্বাস মোদি-শাহ-নাড্ডা-দিলীপদের।  স্মার্টফোনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাদের ভাষণের একটা ভিডিও ক্লিপিংস দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সাধন পুরকায়স্থ। শিলচর শহরের স্থায়ী বাসিন্দা তিনি। চা’য়ের কাপটা ছুঁড়ে ফেলে বললেন—‘আপনাদের ওখানেও তো দেখছি ‘ডবল ইঞ্জিন’ কথাটাকে অষ্টোত্তর শতনামের পর্যায়ে নিয়ে চলে গিয়েছে বিজেপি! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু সাধারণ মণ্ডল সভাপতি—সেই নাম জপে ঘুমোতে যান, ঘুম থেকে ওঠেন। আর ঘুমের মধ্যে নিজেরা সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেন, অন্যদের দেখান!’ 
অসমবাসীও এমন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ২০১৬ সালে। দেখিয়েছিলেন মোদি-শাহরা। সাহেবি কেতায় ইস্তাহারের একটা নাম দিয়েছিলেন—‘ভিশন ডকুমেন্ট’। কী ছিল না সেখানে? বন্ধ কল-কারখানা খোলা। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন। দু’কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের আশ্বাস। পর্যটন শিল্পের বিকাশ। পরিবহণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন। শিলচর থেকে সৌরাষ্ট্র মহাসড়ক নির্মাণ। চা শিল্পের বিকাশ। আর কতকিছু! আক্ষেপের সুরে সাধনবাবু বলছিলেন, ‘কিচ্ছু জোটেনি। কোনও লাভ হয়নি আম-আদমির। নতুন নতুন শিল্প গড়া তো দূরের কথা, বন্ধ হয়ে যাওয়া দু’টি পেপার মিলই খুলতে পারেনি ভাজপা সরকার!’ 
শিলচর থেকে গুয়াহাটি। কোকরাঝাড় থেকে গোয়ালপাড়া। নওগাঁ থেকে বরপেটা—অসমে এই স্বপ্নভঙ্গের ছবি চারিদিকে। আর সেটাকেই এবার বিজেপি বধে অস্ত্র করেছে বিরোধীরা। বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের প্রদীপ দত্তরায় বলছিলেন, ‘২০১৬ সালে কল্পতরু সেজেছিল বিজেপি। অথচ, ডবল ইঞ্জিনের শক্তিতে কাছার ও নওগাঁয়ে দু’টি পেপার মিলই খুলতে পারেনি ওরা।’ হাইলাকান্দি জেলায় কাছারের কাগজ কল বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। নগাঁও মিলটি দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকছিল।

পাকাপাকি ঝাপ পড়ে ২০১৭ সালে। দু’টি মিল মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। খোলার আশ্বাস দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। সরকারে এসে বেমালুম ভুলে গিয়েছেন সোনেওয়ালরা। অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা। কর্মহীন দু’হাজার শ্রমিক সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন বিজেপিকে আর ভোট নয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন। আর তুলে ধরছেন সরকারের ব্যর্থতার দীর্ঘ তালিকা। কথা হচ্ছিল অসমের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি গোপীনাথ দাসের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘দু’টি পেপার মিল খুলতে কোনও সদর্থক ভূমিকাই নিল না সরকার! বরং গুয়াহাটি বিমানবন্দরকে বিক্রি করে দেওয়া হল মোদির বন্ধু আদানিদের। এনআরসি’র ভয়াবহতা তো সবারই জানা! আসলে, ক্ষমতায় এলে চেহারা বদলে ফেলে বিজেপি।’ সম্প্রতি রাজীব ভবনে  ইস্তেহার প্রকাশ করে ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরেছিলেন রাহুল গান্ধী। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এসেও বিভিন্ন সভায় সোনেওয়াল সরকারকে তুলোধনা করছেন। চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরছেন। বলছেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে অসম সরকারের ব্যর্থতা নিয়েও।  বিজেপি অবশ্য বলছে—‘যে যাই বলুক, অসমে ডবল ইঞ্জিনের সরকার সফল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, উজ্জলা সহ বহু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন অসমবাসী। অরুণোদয় প্রকল্পে ৮৩০ টাকা করে পাচ্ছেন। স্কুটি পেয়েছে ছাত্রীরা। জনসভাতেও একযোগে কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছেন অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। নাচে-গানে মাতিয়ে রাখছেন প্রতিটি জনসভা। বিহুর সুরে বাজছে, ‘আইসে আইসে, হিমন্ত আইসে…।’ 
বিরোধীরা কটাক্ষের সুরে বলছেন—‘ব্যর্থতা ঢাকতেই মঞ্চে ভোটরঙ্গ-রসিকতা!’এই মুহূর্তে

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#assam, #bjp, #Double Engine

আরো দেখুন