উত্তরবঙ্গে এইমস – গত দুই বছরে হয়নি কেন, প্রশ্ন মানুষের
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার সাত বছর পর উত্তরবঙ্গে (North Bengal )এইমস(AIIMS) গড়ার কথা মনে পড়েছে বিজেপির(BJP)। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে গেরুয়া শিবিরের ইস্তাহারে উত্তরবঙ্গে এইমস তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ফলে বিষয়টিকে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ বাসিন্দা ভাঁওতা বলেই মনে করছেন। তাঁদের মতে, রাজ্যের মসনদে বসলে এইমস গড়া হবে বলে বলছে বিজেপি। কিন্তু এইমস তো কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি করার কথা। বিজেপি ২০১৪ সাল থেকে দিল্লিতে সরকার চালাচ্ছে। প্রথম পাঁচ বছর বিজেপি নেতৃত্ব সেভাবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গবাসী বিজেপিকে ঢেলে ভোট দেন। আটটির মধ্যে সাতটি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তারপরেও কেটে গিয়েছে দু’বছর। তখনও এনিয়ে গেরুয়া শিবিরে বিশেষ হেলদোল নজরে পড়েনি। এখন ভোটে জিততে তারা এইমস ইস্যু খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন।
এ ব্যাপারে উত্তর মালদহের বিজেপি সংসদ সদস্য খগেন মুর্মু বলেন, এইমস রাজ্যে একটাই হয়। যা হয়েছে কল্যাণীতে। আমরা ক্ষমতায় এলে এইমসের আদলে তিনটি হাসপাতাল গড়ব। কিন্তু বিজেপির প্রকাশিত ইস্তাহারে তো স্পষ্ট লেখা আছে, উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল এবং সুন্দরবনে এইমস হবে। এইমসের আদলে বলে ইস্তাহারে কিছু বলা নেই। অর্থাৎ এটাই যে ভাঁওতা দেওয়ার চেষ্টা তা বলতে ছাড়েননি মালদহের মঙ্গলবাড়ির বাসিন্দা প্রতিমা ঘোষ।
ইংলিশবাজারের বাসিন্দা স্বদেশ ভট্টাচার্য বলেন, উত্তরবঙ্গে এইমস হোক তা আমরাও চাই। কিন্তু এই বিষয়টি কি বিজেপির এতদিনে মনে পড়ল? তারা সাত বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। দিল্লির মসনদে বসার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করলে ভালো হতো। সেক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে এতদিনে এইমস বা ওই ধরনের বড় হাসপাতাল গড়ে উঠতে পারত। ভোটের মুখে বিজেপির এই ধরনের প্রতিশ্রুতিতে মানুষের মন গলবে না।
পুরাতন মালদহ শহরের মঙ্গলবাড়ির ওই বাসিন্দা বলেন, প্রথমবার কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এসেই উত্তরবঙ্গের যেকোনও একটি জেলায় এইমস হাসপাতাল তৈরি করতে পারত। এখন ভোটের সময় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এটা ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। হবিবপুর ব্লক সদরের সুশীল মণ্ডল বলেন, আমাদের এলাকায় বিজেপির বিধায়ক রয়েছেন। উত্তর মালদহের সংসদ সদস্যও আমাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত। বিজেপি জনপ্রতিনিধিদের মুখে কোনওদিন এইমসের কথা শুনিনি। এখন হঠাৎ তাঁদের এইমসের কথা মনে পড়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের বাসিন্দা শিক্ষক রুহুল আলম, চাঁচলের বাসিন্দা পার্থ সরকার বলেন, রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য থাকা সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গে এইমস হয়নি। অথচ তাঁরা রাজ্যের ভোটের ইস্তাহারে এইমস করার কথা উল্লেখ করছেন। এই ঘোষণা শুধুমাত্র ভোট বৈতরণী পার করার জন্য। বিজেপি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের বাসিন্দা মর্তুজা রহমান বলেন, কংগ্রেসের আমলেই রায়গঞ্জে এইমস হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এলে উত্তরবঙ্গে এইমস হবে, এটা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না। স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ আজও অবহেলিত। উত্তরবঙ্গেই বিজেপির সাতজন সাংসদ রয়েছেন। ২০১৯ এর ভোটে জিতে তাঁরা তো এইমসের ব্যবস্থা করতে পারতেন। কোনও উদ্যোগ নেননি। এখন বাংলার ভোটে মানুষকে ধোঁকা দিতে এইমসের টোপ দিচ্ছেন। গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা মৌসুমী চৌধুরী বলেন, লোকসভা নির্বাচনেও একই প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছে বিজেপির গলায়। তাদের দলের সাংসদ হলে তারা এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়বে বলে আমাদের জেলায় এই প্রচার ছিল। আজও কিছুই হয়নি। এখন রাজ্যের ভোটের আগে ফের একথা বলছে। এটা ভোট আদায়ে তাদের ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর রায়গঞ্জের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক রাজীব দেব বলেন, ২০১৯ সালে মানুষ ওদের ভাঁওতা ধরতে পারেনি। এবার ভোটের মুখে ওদের এইমসের সুড়সুড়িতে মানুষ ভুলছে না। ভোটেই জবাব পাবে।