দই, চিঁড়ে, কলা খেয়েই লাভপুরে প্রচারে রানা
শুধু ভোট প্রচারেই নয়, অনেকদিন ধরেই লাভপুরের (Labhpur) স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন তিনি। এবার এই কেন্দ্রে তাঁকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল (Trinamool)। তিনি অভিজিৎ সিংহ ওরফে রানা। লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় লাভপুর আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। সেই শূন্যতা এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে অনেকটাই পূরণ করেন অভিজিৎবাবু। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই লাভপুর বিধানসভার লাভপুর-১ ও ২, হাতিয়া, ইন্দাস, বিপ্রটিকুরী, থিবা, জামনা, আহমদপুর, কুর্ণাহার সহ ১৭টি অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। তবে নির্বাচনী প্রচার বলে কথা। তাই কোনও এলাকাকেই বাদ দিচ্ছেন না তিনি। তাঁর কথায়, নির্বাচনের আগে প্রতিটা গ্রামবাসীর কাছে পৌঁছানো আমার প্রাথমিক লক্ষ্য। তাই পুরোদমে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
লাভপুর-১নম্বর অঞ্চলের বাবুপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়িতেই গত এক বছর ধরে ভাড়া থাকেন তিনি। রোজ সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙে। বৃহস্পতিবারও অভ্যাসমতো ঘুম থেকে উঠে লেবু সহযোগে গরম জল পান করে শুরু করলেন দিন। কিছুক্ষণ খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে চিড়ে, দই, কলার সঙ্গে লাভপুরের খাস মণ্ডা দিয়ে সারলেন প্রাতরাশ। রোজের মতো সকাল আটটা থেকে ন’টা শুনলেন এলাকাবাসীর অভাব-অভিযোগ। এরপর প্রচার সঙ্গী যোগগুরু সুশীল ভট্টাচার্য্য, কয়েকজন দলীয় কর্মী, একজন নিরাপত্তারক্ষী ও স্থানীয় থানার পুলিস কর্মীদের নিরাপত্তাবেষ্টিত হয়ে চড়ে বসলেন সাদা স্করপিওতে। পৌঁছলেন জামনা অঞ্চলের মামোদপুর গ্রামে। মাথার উপর তখন গনগনে সূর্য। তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি বাড়ি ঢুকে শুরু করলেন নিজের নির্বাচনী প্রচার। চলতি পথে চষা মাঠের আলপথ ধরে এগিয়ে গিয়ে মুখোমুখি হলেন কর্মরত চাষিদের। আলাপচারিতার মাঝেই খোঁজ নিলেন পরিবারের। সাময়িক তৃষ্ণা মেটালেন স্যালোর শীতল জলে। এদিনও তাঁর কার্যক্রম রেকর্ড করতে সঙ্গী হন কমিশনের ভিডিওগ্রাফার। মামোদপুরের প্রতিটি বাড়ি ঘুরে কেমপুর, হরানন্দপুর, কুস্তর প্রভৃতি অঞ্চলেও সারেন নির্বাচনী প্রচার। এলাকাবাসীদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ৬৯টি জনমুখী প্রকল্পের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। এরই ফাঁকে বলেন, কৃষিনির্ভর বিধানসভা লাভপুর। স্থানীয়রা কৃষিজীবী। প্রচারের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগও শোনেন। নির্বাচনে জিতলে সব সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান। গত দু’বছর ধরে লাভপুরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এলাকার পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর দাবি। তাই, এবার নির্বাচনে জিততে ১০০শতাংশের বেশি আশাবাদী অভিজিৎবাবু। প্রার্থী কাছে যেতেই এলাকার বাসিন্দা রণজয় মিশ্র, তন্ময় ঘোষ, সত্যনারায়ণ পালরা বলেন, গত দু’বছর ধরে এই এলাকায় আপনি যেভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করেছেন তাতে জেতার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন। আমরা আপনার পাশে আছি।
মাঝ দুপুরে ভাড়া বাড়িতে ফিরে ভাত, বিউলির ডাল, ঝিঙে পোস্ত, উচ্ছে আলু ভাজা আর টক দিয়ে সারলেন মধ্যাহ্নভোজ। ক্ষণিকের বিশ্রাম শেষে ফের পথে নামলেন। দুপুর তিনটে নাগাদ সাঁইথিয়া ব্লকের সাংড়া অঞ্চলে বাড়ি বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান পেশ করে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচার করলেন। এরপর আহমদপুরের পার্টি অফিসে কর্মিসভা শেষ করে রাত ন’টায় ফিরলেন লাভপুরের ভাড়া বাড়িতে।