জঙ্গলমহলে মহিলা ভোটারদের ঢল
শনিবার প্রথম দফার ভোটে জঙ্গলমহলের দু’ই কেন্দ্রে মহিলাদের উপস্থিতি বিশেষ নজর কাড়ল। সকাল-সকাল রানিবাঁধ ও রাইপুর কেন্দ্রে মহিলারা ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। জঙ্গলমহলে (Jangalmahal) ভয় কাটিয়ে মহিলাদের এই উৎসাহ গেরুয়া শিবিরে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না তো! সেটাই এখন চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। বিকেল পর্যন্ত অবশ্য ওই দু’ই কেন্দ্রে সেভাবে কোনও বিশৃঙ্খলা বা অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি।
বাঁকুড়ায় প্রথম দফার ভোটে জঙ্গলমহলের এই দু’টি কেন্দ্রে কার্যত উৎসবের মেজাজে ভোট দিলেন বাসিন্দারা। সকাল ৭টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে যায়। অনেকে খুব সকালে এসে ভোট দেন। কোথাও আবার দিনের প্রথম বেলার কাজ করে বুথে আসেন। একসঙ্গে দল বেঁধে বুথে এসেও ভোট দিতে দেখা গিয়েছে জঙ্গলমহলের দু’ই বিধানসভা আসনে।
রানিবাঁধ বিধানসভার ছেন্দাপাথর হাইস্কুলে ভোট দিতে এসেছিলেন মঙ্গলি টুডু। তাঁর সঙ্গে অন্যান্যরাও ছিলেন। তাঁরা বলেন, সকাল থেকে মহুল কুড়িয়ে বাড়ি ফিরেছি। তারপর ভাত খেয়ে ভোট দিতে এলাম। খুব ভালো ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই।
জঙ্গলমহলে আদিবাসী মহিলাদের কাজের মধ্যে মহুল ফল ও পাতা কুড়নো অন্যতম। তারপর বাড়ির কাজ করে তাঁরা বুথমুখী হয়েছেন।
জঙ্গলে ঘেরা বারিকুল থানার ছেন্দাপাথর হাইস্কুলের বুথে ভোট দিয়েছেন শ্যামল সিং সর্দারও। তিনিও বললেন, এখন আর মনে কোনও ভয় নেই। চুপচাপ ভোট হয়। রাজনৈতিক অশান্তিও কিছু নেই। শান্তি ফেরায় মানুষও স্বস্তিতে ভোটে অংশ নেন। রানিবাঁধ থেকে বারিকুল পর্যন্ত ঘন জঙ্গলের রাস্তা মহুলের গন্ধে ম ম করছিল। জঙ্গলের মধ্যেই ঝকঝকে রাস্তা। তবে তাতে যান চলাচল নগণ্যই। মাঝে-মাঝে কেউ কাঠ কুড়িয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছু জায়গায় চোখে পড়ল জঙ্গলের মাঝেই গাছে বাঁধা তৃণমূল-বিজেপির পতাকা। বারিকুল, পূর্ণাপানি, ছেন্দাপাথর, দারকেদি প্রভৃতি এলাকার বুথগুলি ছিল জঙ্গলে ঘেরা। কোথাও একটি আবার কোথাও দু’টি বুথ করা হয়েছে।
এই প্রথম জঙ্গলমহলের মানুষ করোনার বিধি মেনে ভোট দিলেন। তবে ষোলআনাই যে বিধি মানা হয়েছে এমন নয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ছিল, ভোটারদের মাস্ক পরে আসতে হবে। প্রত্যেক বুথে রাখা হবে ৫০টি করে মাস্ক। কিন্তু রানিবাঁধ বা রাইপুরে মাস্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক ভোটারকেই খালি মুখে ভোট দিতে দেখা গেল। অনেকে আবার মুখে গামছা, ওড়না, রুমাল বেঁধে ভোট দিলেন। বুথের বাইরে সেফটি সার্কেলও আঁকা হয়েছিল।
এক্ষেত্রে বুথের দায়িত্বে থাকা আশাকর্মীদের একাংশের দাবি, অনেকেই মাস্ক না পরে ভোট দিতে আসছেন। তবু যাঁদের ছিল না, তাঁদের মাস্ক দেওয়া হয়েছে।
রাইপুর কেন্দ্রের নারানপুর বুথে এদিন দুপুরে ভোট দিতে এসেছিলেন দুলালি হাঁসদা, সুমিত্রা বাস্কেরা। তাঁরা এদিন প্রখর রোদেও পার্শ্ববর্তী ধরমপুর থেকে ভোট দিয়ে হেঁটে আসেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। তাঁরা বলেন, খেতে-খামারে কাজ করে সুযোগ বুঝে ভোট দিতে এসেছিলাম। করোনা নিয়ে আমাদের এখানে ভয় নেই। ভোট নিয়েও কোনও ভয় হয়নি। তবে এদিন সকাল ৮টা নাগাদ ছাতনা বিধানসভার ইঁদপুর গোয়েঙ্কা স্কুলের ২৬৭ নম্বর বুথে ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভোটগ্রহণ শুরুই হয়নি। সেখানেও লাইনে মহিলাদেরই দেখা যায়। তাঁরা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশও করেন। রানিবাঁধ বিধানসভার কয়েকটি বুথেও ইভিএম বিকল হয়েছিল। সেগুলি পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান সেখানকার অবজার্ভার গোবিন্দ বড়কে।
রাইপুর, রানিবাঁধ উভয় কেন্দ্রেই এদিন মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এব্যাপারে রাইপুরের তৃণমূল প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, আমাদের নেত্রী মহিলাদের ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা করেছেন। স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পে মহিলারা উপকৃত হয়েছেন। তাই এদিনের ভোটে মহিলারা আমাদের উপরেই আস্থা রেখেছেন।
রানিবাঁধের বিজেপি (BJP) প্রার্থী ক্ষুদিরাম টুডু বলেন, এদিন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। মহিলারাও স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। বাড়িতে বেকার ছেলে রয়েছে। তাই সেই বাড়ির মহিলারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। রানিবাঁধের সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম বলেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রচুর সংখ্যক মহিলা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা এখানে সংযুক্ত মোর্চাকেই সমর্থন করবেন।
রানিবাঁধ বিধানসভার হিড়বাঁধ ব্লকে তিলাবাইদ গ্রামে রাস্তার দাবিতে এদিন বাসিন্দারা ভোট বয়কট করেন। খাতড়ার মহকুমা শাসক মৈত্রী ভট্টাচার্য বলেন, ওই গ্রামের রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট হয়েছে। এলাকায় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন।