কালিয়াগঞ্জে প্রার্থী বদলের দাবিতে আমরণ অনশন বিজেপি কর্মীদের
কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার (West Bengal Assembly Election 2021) বিজেপি প্রার্থী সৌমেন রায়কে সরানোর দাবিতে এবার আমরণ অনশনে বসলেন গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা। শনিবার রাজ্যের অন্যত্র বিধানসভা ভোটের প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ শুরুর দিনেই কালিয়াগঞ্জে প্রার্থী বদল নিয়ে এধরনের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়ে পদ্মশিবিরের কার্যকর্তারা। আর বিজেপির (BJP) প্রার্থী বদল নিয়ে দলেরই কর্মীসমর্থকদের আমরণ অনশন আন্দোলনের ঘটনায় বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। অন্যদিকে, অনশনকারীদের বক্তব্য, আমরা সৌমেন রায়কে চাই না। পরিবর্তে স্থানীয় ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন যে কোনও দলীয় নেতাকে প্রার্থী করা হোক।
এদিন কালিয়াগঞ্জ শহরের সুকান্ত মোড়ে রাস্তার পাশে মঞ্চ বেঁধে এই কর্মসূচিতে শামিল হন গেরুয়া শিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাদের বক্তব্য, গত ১৮ই মার্চ দিল্লি থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে একজন বহিরাগতর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ওই প্রার্থীর ব্যক্তিগত জীবনও কেচ্ছা কীর্তিতে ভরপুর। তার নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাঁর বৈধ স্ত্রী বলে দাবি করে ফালাকাটা নিবাসী এক মহিলা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সৌমেনবাবুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন। এঘটনার পরে সৌমেনবাবুর অনুগামীরাও পালটা ভিডিও আপলোড শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ভিডিও চালাচালির ফলে তাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি ওই কর্মী সমর্থকদের। তাদের আরও বক্তব্য, কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় বিজেপির জয় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু “বহিরাগত ও অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি”র প্রার্থীর কারণে এখন দলের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীরা পুরোপুরি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কি করে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে বেরোবেন, তা ভেবে উঠতে পারছেন না দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা। সে কারণেই তার প্রার্থী পদ বাতিলের দাবিতে এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। উল্লেখ্য, একই ইস্যুতে কয়েকদিন আগেও কালিয়াগঞ্জ শহরের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল হন দলীয় নেতা কর্মীরা।
জানা গিয়েছে, স্থানীয় বিজেপি কর্মী রানা প্রতাপ ঘোষ, গৌতম বিশ্বাস, তন্ময় বিশ্বাস এদিনের এই কর্মসূচির শুরুর দিনে নির্জলা অনশন শুরু করেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন দলীয় বহু নেতা-কর্মী সদস্যরা। অনশনরত ওই তিন দলীয় কর্মী বলেন, আমরা চাই অবিলম্বে প্রার্থী পরিবর্তন করা হোক। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছি। আশা করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এব্যাপারে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেবেন। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। তারপরেও যদি প্রার্থী বদল করা না হয়, তাহলে নির্দল থেকে কোনও প্রার্থীকে দাঁড় করানো হবে। এব্যাপারে আলোচনা হলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা। তাদের বক্তব্য, বহিরাগত ও অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন সৌমেনবাবুকে আমাদের এখানে প্রার্থী করার কারণে গোটা গেরুয়া শিবিরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দলীয় কর্মীরা অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, এদিনই রায়গঞ্জ শহরের উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির কার্যালয়ে দলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়িকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন কালিয়াগঞ্জের প্রার্থী সৌমেন রায়। পরে তিনি বলেন, আমি কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দাদের কাছে আগাম হোলির শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। হোলির দিন থেকেই আমি কালিয়াগঞ্জে প্রচারের কাজ শুরু করব। এতদিন তিনি কেন প্রচারে নামেননি? এই বিষয়ে বলতে গিয়ে তার বক্তব্য, জেলা সভাপতি আমার প্রচারের কর্মসূচি ঠিক করবেন। তার নির্দেশ মতই আমি প্রচারের কাজ শুরু করব। অন্যদিকে, বৈধ স্ত্রী বলে দাবি করা ওই মহিলার ভিডিও আপলোড নিয়ে সৌমেনবাবু বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে এবারের ভোটে পরিবর্তনের পক্ষে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার বাসিন্দারা রায় দেবেন বলে আমার বিশ্বাস। কালিয়াগঞ্জে তার বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার প্রার্থীপদ নিয়ে সকলেরই আপত্তি করলে নিশ্চয়ই তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। বাস্তবে অনেকে যোগাযোগ তো করছেন। আসলে বিজেপিকে যারা ভালোবাসে, তারা নিশ্চয়ই দলীয় প্রার্থীকে দেখে নয়, দল দেখে ভোট দেবেন।