শেষদিনের প্রচারে বহিরাগতদের এনে নন্দীগ্রামে ‘মুখরক্ষা’ বিজেপির
মঙ্গলবার নন্দীগ্রামে ভোট প্রচারের শেষদিনে বাইরে থেকে লোক এনে ‘মুখরক্ষা’র চেষ্টা করল বিজেপি (BJP)। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নন্দীগ্রাম-২ব্লকের ভেটুরিয়া থেকে রেয়াপাড়া শিবমন্দির পর্যন্ত রোড শো করেন। শুধু নন্দীগ্রামের উপর ভরসা করলে বিপাকে পড়তে হবে বুঝেই বিজেপি নেতৃত্ব ভগবানপুর, পটাশপুর, খেজুরি প্রভৃতি জায়গা থেকে বাসে করে লোক আনার ব্যবস্থা করেছিল। কারণ এদিন নন্দীগ্রামে অমিত শাহ ছাড়াও বিকেলে মিঠুন চক্রবর্তীর পদযাত্রা ছিল। তাই শেষমুহূর্তে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য আয়োজনের কোনও ত্রুটি রাখেনি। তার ফলও পেয়েছে গেরুয়া শিবির। রোড শোয়ে ব্যাপক ভিড় ছিল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার নন্দীগ্রামে (Nandigram) পরপর তিন জায়গায় সভা করে বিজেপি-র বিরুদ্ধে বহিরাগতদের ঢোকানোর অভিযোগ করেছিলেন। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে, সেসম্পর্কে তিনি নির্দিষ্ট তথ্যও দিয়েছিলেন। তারপর মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম থানার পুলিস বহিরাগতদের খোঁজে কয়েকটি জায়গায় হানা দেয়। এদিন ভোট প্রচার শেষ হওয়ার পর বেশকিছু জায়গায় বহিরাগতদের ‘মজুত’ করা হয়েছে বলে নন্দীগ্রামজুড়ে চর্চা চলে। মঙ্গলবার দুপুরে অমিত শাহের রোড শোয়ে ভগবানপুর, পটাশপুর, খেজুরি, কাঁথি এলাকা থেকে অনেক লোকজনকে আসতে দেখা গিয়েছে।
ভগবানপুর-২ ব্লকের বরজ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির ২৪৭নম্বর বিজয়নগর বুথ সভাপতি তপন সামন্ত এদিন অমিত শাহের (Amit Shah) সভায় যোগ দেন। শুধু তপনবাবু নন, বরজ পঞ্চায়েতের বিজয়নগর গ্রাম থেকে বিজেপি কর্মী রতন শী, সুশান্ত বেরা, তাঁর স্ত্রী অচর্না বেরা, সাগর দাস সহ অনেকেই রেয়াপাড়ায় হাজির হন। তপনবাবু বলেন, এই মুহূর্তে গোটা রাজ্য তথা দেশের নজর এই নন্দীগ্রামের দিকে। ১ এপ্রিল নির্বাচন। রাজ্যবাসী এই নন্দীগ্রামে ভোটের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন। এখানকার কর্মীদের উৎসাহ দিতে আমরা অমিত শাহের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছি।
ভগবানপুরের শিমুলিয়া গ্রামের চন্দন ভক্তা, মাধাখালির উত্তম চক্রবর্তী, পটাশপুরের আড়গোয়ালের কানাই মণ্ডল সহ বহু বিজেপি কর্মী এদিন নন্দীগ্রামে অমিত শাহের পদযাত্রায় অংশ নেন। ২৭মার্চ কাঁথি এবং এগরা মহকুমার মোট সাতটি বিধানসভা আসনে ভোট হয়ে গিয়েছে। সেইসব জায়গায় বিজেপির কর্মীরা এদিন
নন্দীগ্রামে হাজির।
বেলা ১২টা নাগাদ অমিত শাহ নন্দীগ্রামের হরিপুরে অস্থায়ী হেলিপ্যাডে নামেন। সেখান থেকে সড়ক পথে ভেটুরিয়ায় এসে রোড শোয় যোগ দেন। ব্যান্ড, তাসা, রণপা সহযোগে এদিনের রোড শোকে বর্ণাঢ্য করে তোলা হয়েছিল। গোটা যাত্রাপথের কালো পিচ রাস্তা গোলাপের পাপড়িতে ঢেকে যায়। অশান্তি এড়াতে প্রচুর পুলিস ও আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে ভেসে অমিত শাহের রোড-শো শেষ হয় রেয়াপাড়া শিবমন্দিরে। সেখানে গিয়ে পুজো দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপর রেয়াপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন।
সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহ বলেন, বাংলার মানুষ আসল পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। মমতা দিদি এখানে হারলেই বাংলায় পরিবর্তন নিশ্চিত। এখানে বড় ব্যবধানে জিতবেন আমাদের প্রার্থী। সোমবার রাতে নন্দীগ্রামে এক বিজেপি কর্মীর স্ত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ টেনে অমিত শাহ বলেন, বাংলার মেয়েরা নিরাপদ নন। অশীতিপর বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হল। অন্যদিকে বাংলার মহিলারা অত্যাচারিত হচ্ছেন। বাংলা অপরাধমুক্ত প্রশাসন চায়। সেজন্য বাংলায় আসল পরিবর্তন জরুরি।
এদিন বিকেলে পাঁশকুড়া পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সিন্টু সেনাপতির সমর্থনে রোড শো করেন অমিত শাহ। বিকেলে টেঙ্গুয়া থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রোড শো করেন মিঠুন চক্রবর্তী।