উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

শঙ্করের বিরুদ্ধে ময়দানে বিজেপির বিক্ষুব্ধরা

April 2, 2021 | 2 min read

‘আমি তোমাদেরই লোক’ প্রমাণ করার জন্য তিনি এখন চে গুয়েভারাকে ভুলে গিয়েছেন। বসন্ত উৎসবে ইসকন মন্দিরে মাটিতে বসে হাততালি দিয়ে হরে কৃষ্ণ, হরে রাম বলছেন। ভোটযুদ্ধে জেতার জন্য দেবতার আশীর্বাদ পেতে মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করছেন। পথ চলতে চলতে দেবালয় দেখলে কপালে হাত ঠেকিয়ে ঘনঘন প্রণাম করতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তিনি হলেন এবার শিলিগুড়ি আসনের বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষ। একদা কট্টর বামপন্থী বলে নিজেকে যিনি মনে করতেন। 


কিন্তু, এতে ভোটাররা কতটা প্রভাবিত হবেন, তা ভোটের ফলই বলবে। তবে শিলিগুড়িতে বিজেপির নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ কিন্তু তাঁকে আপন করে নিতে পারেননি। বলা ভালো, শিলিগুড়ি বিধানসভা আসনে তাঁকে দলের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা। শঙ্করবাবু দীর্ঘদিন সিপিএমে ছিলেন। কমিউনিস্ট ভাবধারায় নিজেকে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিচিত করেছিলেন। স্বগর্বে হাতে চে গুয়েভারার ট্যাটু এঁকে ঘুরে বেড়াতেন। সেই শঙ্কর ঘোষ দলে এসেই রাতারাতি টিকিট পেয়ে যাওয়ায় বিজেপির অন্দরে কার্যত ‘যুদ্ধ’ চলছে। দলের বহু নেতা-কর্মী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বসে গিয়েছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিক্ষুব্ধ নেতা আবার আড়াল থেকে শঙ্কর ঘোষের বিরুদ্ধে প্রচারেও নেমে পড়েছেন। একজন তো আবার দল ছেড়ে আমরা বাঙালিতে যোগ দিয়ে এবার শিলিগুড়ি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। 


তাঁদের এই লড়াই যতটা শঙ্কর ঘোষের নীতি-আদর্শ বিসর্জনের বিরুদ্ধে, ঠিক ততটাই  লড়াই হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বের নীতিহীনতার জবাব দেওয়ার। ভোটের প্রচারে শঙ্কর ঘোষকে সাধারণ মানুষেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁর নাস্তিক মনোভাব থেকে আস্তিকে রূপান্তর নিয়ে। রাজনীতির পদ লাভে ধর্মকে আঁকড়ে ধরার নতুন কৌশলে। 


বিক্ষুব্ধদের একটি অংশ সিপিএমের নেতা হিসেবে শঙ্কর ঘোষ অতীতে বিজেপির বিরুদ্ধে যে আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তৃতা করেছেন, সংবাদমাধ্যমকে বিবৃতি দিয়েছেন, তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে শঙ্কর ঘোষের এমন কিছু বক্তব্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। যেখানে শঙ্কর ঘোষকে বলতে দেখা যাচ্ছে— ‘আমাদের দুর্ভাগ্য ধর্ম ও জাতপাত এবং ভাষার নামে তৃণমূল এবং বিজেপি রাজ্য ও দেশটাকে বিক্রি করে দিচ্ছে।’  যদিও ওইসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি টিম দৃষ্টিভঙ্গি।


শঙ্করবাবুর অতীতের এই বক্তব্যকে সামনে তুলে ধরে  বিজেপির  বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রশ্ন, কিছুদিন আগেও যিনি প্রকাশ্যে বিজেপি ও তার শীর্ষ নেতাদের এভাবে আক্রমণ করেছেন, রাতারাতি সাধারণ মানুষ তাঁকে কীভাবে বিজেপির নীতিনিষ্ঠ নেতা হিসেবে মেনে নেবে। তা তিনি যতই মন্দিরে গিয়ে লুটোপুটি খান না কেন? এতে বিজেপিই  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন দল থেকে বেরিয়ে এসে আমরা বাঙালির হয়ে মনোননয়ন জমা দেওয়া প্রার্থী চয়ন গুহ সহ বহু বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মী। তাঁদের কথায়, এতে সাধারণ মানুষের কাছে বিজেপির  নীতি-আদর্শ গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। শঙ্কর ঘোষ সবটাই জানেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচার চলছে। সিপিএমে থাকার সময় আমি যা বলেছি, সেটা বিজেপির নীতি-আদর্শের পরিপন্থী ছিল। আমি তখন যে দল করতাম সেই মঞ্চে থেকে আমাকে এটা বলতে হতো। তাই তখন এসব বলেছিলাম। আর আমি সেই দলের ভিতর থেকে যে কথাগুলি বলতাম সেটা তখন প্রকাশ্যে বলা যেত না। এখন সেটাই প্রকাশ্যে বলছি। তবে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। কে কি বলল , তাকে আমি পাত্তা দিতে চাইছি না। অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। সামনে এগনোর লক্ষ্যেই রাজনীতির এই লড়াইয়ে নেমেছি। আমি যে অক্ষরেখা ধরে এগচ্ছি, তাতে পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই। তাই আমার অতীতের বক্তব্য নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে প্রচার চলছে, তাকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না।  কারণ, মানুষ সবসময় সামনেই এগতে চায়। অতীতকে সকলে ভুলে যায়। কাজেই এ ধরনের প্রচার আমার বিরুদ্ধে মানুষকে প্রভাবিত করবে না, ভোটেও কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই আমার বিশ্বাস। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #shankar ghosh

আরো দেখুন