বিপুল বাহিনীই সার, অশান্তি ঠেকাতে ব্যর্থ কমিশন
বৃহস্পতিবারের হাই ভোল্টেজ ভোটে ‘নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো’ করতে ১৪৪ ধারা সহ নানা আয়োজন ছিল কমিশনের। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় দফার ভোট পুরোপুরি নির্বিঘ্নে হল না। বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা, গাড়ি ভাঙচুর, অবাঞ্ছিত জমায়েত, বুথ দখলের মতো গুরুতর বহু অভিযোগে দিনভর নাজেহাল হতে হল নির্বাচন কমিশনকে। আর এই ‘ব্যর্থতা’র দায় সরাসরি তাদের উপর চাপিয়ে প্রথম সরব হলেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। একে একে সেই সুরেই কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলল বিজেপি ছাড়া অন্য বিরোধী দলগুলি। কমিশনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিএম নেতা রবীন দেব। প্রশ্ন তুললেন, ‘১৪৪ ধারা, বিপুল বাহিনীর ঘোষণা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ ভোট করতে পারল না নির্বাচন কমিশন। কার্যত ১৪৪ ধারা নিয়ে ছেলেখেলা হল।’
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় (Sukhendu Sekhar Roy) বললেন, ‘বিজেপি গুন্ডারা ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় বুথ এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। বিজেপি পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন জায়গায় হিংসার আশ্রয় নিয়েছে। কেশপুরে দলীয় কর্মীকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বহিরাগতরা। ১৪৪ ধারা জারি এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করা সত্ত্বেও কী করে এমন ঘটনা ঘটল? এদিন ৬৩টি অভিযোগ করা হয়েছে।’
খুনের অভিযোগ দিয়েই দিন শুরু। এদিন সকাল ছ’টা নাগাদ প্রথম কলকাতায় কমিশনের অফিসে খবর আসে, কেশপুরে উত্তম দলুই নামে এক তৃণমূল (Trinamool) কর্মী খুন হয়েছেন। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় আট জন। কেশপুরেই গুণহারা গ্রামে এক প্রার্থী সহ সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আক্রান্তের ঘটনায় ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নন্দীগ্রামের বয়াল এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার কোনও ছবি চোখে আসেনি। সে ব্যাপারে সরব হন স্বয়ং মমতা। সেখানকার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট আজ, শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে দিল্লির নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। শুধু নন্দীগ্রাম নয়, যখন যে প্রান্ত থেকে অভিযোগ এসেছে, কমিশন তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। আজ ওয়েবকাস্টিং, সিসিটিভি, ভিডিওগ্রাফি খতিয়ে দেখা হবে। তারপরই ঠিক হবে, পুনর্নির্বাচন হবে কি না।
প্রথম দফার থেকে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। এদিন সিভিজিল, এনজিএস এবং সিএমএস সিস্টেমের মাধ্যমে ১ হাজার ৬০৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব কমিশনের ব্যর্থতার প্রশ্নে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বয়ালে মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়েছে। তবে ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা পড়েনি। অভিযোগ আসা মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোট সংক্রান্ত অশান্তির জন্য ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’