রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ভোটের ফলাফল নিয়ে শাহী ভবিষ্যদ্বাণী শুধুই তামাশা, বলছে পরিসংখ্যান

April 2, 2021 | 2 min read

চলছে চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। প্রত্যেকটি রাজ্যেই অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয় সেনাপতি হলেন অমিত শাহ। বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্যে তিনি প্রচার করছেন। কিন্তু এই প্রচারে বেরিয়ে তিনি মুহ ফস্কে মাঝে মাঝে এমন কিছু কথা বলছেন যা তাকে পরিণত করছে হাসির খোরাকে।

কিছুদিন আগেই বাংলায় প্রথম দফার নির্বাচন হয়েছে। গতকাল ছিল দ্বিতীয় দফার ভোট। এই দুই দফার পর, শাহের দাবি বিজেপি নাকি ৩০টির বেশি আসনে জিতবে। স্বভাবতই তার এই ভবিষ্যদ্বাণী সংবাদ শিরোনামে এসেছে। তাকে কটাক্ষ করে মমতা বলেছিলেন (প্রথম পর্যায়ের পর) ৩০ এ ২৬ দিলেন কেন, ৩০ এ ৩০ দিলেই পারতেন। বর্ষীয়ান নেতা যশোবন্ত সিন্হা কটাক্ষ করে বলেন, ২৯৪ আসনের মধ্যে ৩০০ পাবে বিজেপি।

হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভবিষ্যদ্বাণী কটাক্ষের বিষয়ই বটে। ২০১৮ থেকে অমিত শাহ মোট ১১ টি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগাম ঘোষণা করেছিলেন। প্রত্যেকটি ছিল ভুল। তার মত জ্যোতিষীরাও যদি নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে এইরকম অনুমান করতে থাকেন তাহলে তাদের ব্যবসা মোটেই টিকবে না।

উদাহরণস্বরূপ, গত বছর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহ বলেছিলেন যে বিজেপি কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের ৭০ টির মধ্যে ৪৫ টি আসনে জিতবে। কিন্তু সেইবার বিজেপি মাত্র ৮ টি আসন পেয়েছিল। ২০১৯- এর ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৮১ টি আসনের মধ্যে ৬৫ টি আসন পাবে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি আদতে পেয়েছিল ২৫ টি আসন। ২০১৮-য় ছত্তিসগড়েও অমিত শাহ বলেছিলেন তারা জিতবেন। আদতে, ৯০ টির মধ্যে মাত্র ১৫ টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।

গত বছর বিহার বিধানসভা ভোটের সময়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছিলেন বিজেপি দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সরকার গড়বে। তার মানে ২৪৩ আসনের মধ্যে এনডিএ- ১৬২ টি আসনে জিতবে। বাস্তবে, কোনোরকমে সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে মাত্র ৩ টি আসন বেশি পেয়ে অর্থাৎ ১২২ টি আসন জিতে বিহারে মুখরক্ষা হয় এনডিএর। ২০১৮ তে মিজোরামেও সরকার গড়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন শাহ। বিজেপি সেখানে ৪০টি আসনের মধ্যে একটি মাত্র আসনে জিতেছিল।

নিন্দুকেরা বলছে, অমিত শাহ হলেন এমন এক জ্যোতিষী যিনি কল্পনার জগতে বাস করেন। যার সাথে বাস্তবের কোন সম্পর্ক নেই। জ্যোতিষীরা মূলত ভবিষ্যতের একটা আবছা ধারণা দিয়ে থাকেন। আর সেখানেই চালাকি। কিন্তু শাহ সবসময়ই সংখ্যা উল্লেখ করে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। আর বারবারই ডাহা ফেল করেন। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্যপক সাফল্যের পরে সবার ধারণা হয়েছিল ভোটারদের মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অমিত শাহ। কিন্তু তাঁর একের পর এক ভুল অনুমান সেই ধারণাকে মুছে দিয়েছে। বরং সেই জায়গায় তিনি হয়ে উঠেছেন হাসির পাত্র।

যদিও এর পেছনে একটা বড় রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে। ভোটের কয়েক মাস আগেই মানুষ ঠিক করে ফেলেন কোন দলকে ভোট দেবেন। ফলে দোলাচলে থাকা ফ্লোটিং ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। যে দল হারতে চলেছে সেই দলকে ভোট দিতে নারাজ জনতা। তাই নিজের দলের দিকে ভোটার টানতেই অমিত শাহ দলের জয় সম্পর্কে এই মিথ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করে থেকেন।

নির্বাচনের আগে সব দলের নেতারাই দলের জিত সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। কিন্তু শাহের কায়দায় মুড়ি মুড়কির মত কেউ করেন না। শাহের ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটাই কৌশলগত। তিনি মনে করেন ভোটাররা বোকা, অতীতকে খুব সহজে ভুলে যান, তাই সহজেই আবার তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীকে বিশ্বাস করে নেবেন। কিন্তু এখন অমিত শাহের ভবিষ্যদ্বাণী গোটা দেশের ভোটারদের কাছেই শুধুই প্রহসন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Amit shah, #bjp, #Prediction

আরো দেখুন