প্রিসাইডিং অফিসার না ডাকলে বুথে ঢুকবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী: কমিশন
কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসার না চাইলে বুথে ঢুকতে পারবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। এমনকী ভোটারদের সচিত্র পরিচয় পত্র পরীক্ষা করবেন ফার্স্ট পোলিং অফিসার, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা নয়। এদিন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নোডাল অফিসার বিএসএফের আইজি অশ্বিনীকুমার সিংকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন তৃতীয় দফার ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে এক বৈঠক করেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য পুলিসের নোডাল অফিসার তথা এডিজি আইনশৃঙ্খলা জগমোহন এবং বিএসএফের আইজি। সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ভূমিকা নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা সম্পর্কে অবহিত করান মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।
এদিন বিজেপি বাদে সব রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন। প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে ৩০০টি অভিযোগ সহ চিঠি দেন। সুব্রতবাবু বলেন, নির্বাচন কমিশন নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী চলছে। ৫০ বছর আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি, এভাবে একটি রাজ্যের ভোটে দিল্লির প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখিনি। প্রধানমন্ত্রী কেন ভোটের দিন সভা করবেন? এই একই ইস্যুতে সরব হন কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের রবীন দেব। তাঁরা বলেন, ভোটের দিন প্রধানমন্ত্রী সভা করলে ভোটাররা প্রভাবিত হতে পারে।
এই বিষয়টি মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিল্লিতে পাঠিয়ে দেন। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। তবে বিজেপি কলকাতা ও দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে ডেপুটেশন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় সন্তোষপ্রকাশ করেছে।
এদিকে, নন্দীগ্রামের বয়াল বুথের সামনে ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন দুই বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক ও বিবেক দুবে। সেই রিপোর্টে ভোটদান বন্ধ হওয়ার কথা কোথাও উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি ভালোইভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বুথের বাইরে অনেক লোক জড়ো হয়েছিল, কিছু সময়ের জন্য ধীরগতিতে ভোট চলেছে। কিন্তু ভোটপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়নি। দ্বিতীয় দফায় ৮৬.১১ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা প্রথম দফা থেকে বেশি। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮৬.৭৪, পূর্ব মেদিনীপুরে ৮৭.৪২, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮৩.৮৪, বাঁকুড়ায় ৮৬.৯৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। রাজ্যের ‘হাইভোল্টেজ’ কেন্দ্র নন্দীগ্রামে ভোট পড়েছে ৮৮.০১ শতাংশ। তবে কোথাও কোনও পুনর্নিবাচন হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব। ভোট পরবর্তী সংঘর্ষ ঠেকাতে পূর্ব মেদিনীপুরে ছয় কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা হয়েছে। আগামী ছ’তারিখ তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। বুথ পাহারার জন্য ৬১৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে। যার মধ্যে বারুইপুর পুলিস জেলায় ১৩০ কোম্পানি, ডায়মন্ডহারবার পুলিস জেলায় ১১৩ কোম্পানি, সুন্দরবন পুলিস জেলায় ৬৪ কোম্পানি, হুগলি গ্রামীণ পুলিস জেলায় ১৬৭ কোম্পানি, হাওড়া গ্রামীণ পুলিস জেলায় ১৩৩ কোম্পানি এবং হাওড়া পুলিস কমিশনারেটে ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে।