স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে প্রচারে আক্রমণ, এদিকে ছায়া সঙ্গীই পেলেন পরিষেবা – মুখ পুড়ল মিঠুনের
সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী(Swasthya Sathi) চালু করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বিজেপি(BJP) চাইছে এই পরিবর্তনের পরিবর্তন। স্বাস্থ্যসাথী নাকি ভাঁওতা, সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই বেহাল, রাজ্যজুড়ে এমন প্রচার চালাচ্ছেন দলের বড়-ছোট-মাঝারি নেতারা। এই প্রচারে তাদের নতুন ও অন্যতম প্রধান মুখ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী(Mithun Chakraborty)। দলের ‘স্টার ক্যাম্পেনার’ মিঠুন বাংলার নানা প্রান্তে তৃণমূল(TMC) সরকার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুমুল সমালোচনা করছেন। পরিস্থিতি যখন এই, অভিনেতার ‘ছায়াসঙ্গী’ প্রদ্যুৎ হালদারই(Prostut Haldar) সল্টলেকে একটি নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে নিখরচায় হৃদরোগের চিকিৎসা করালেন মমতার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে।
এই খবর স্বভাবতই বেকায়দায় ফেলেছে বিজেপিকে। তৃণমূল জোরদার প্রচার শুরু করেছে। ‘দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মিবৃন্দ’ বিধানসভার বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ করেছে। মূল বক্তব্য, ‘এবার মিঠুনদা নাচবেন নাকি কাঁদবেন?’ হাসপাতালে প্রদ্যুৎবাবুর ‘কন্ট্যাক্ট পার্সন’ হিসেবে যে নম্বর দেওয়া ছিল, শুক্রবার তাতে যোগাযোগ করা হয়। বিমানকুমার সরকার নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, ‘প্রদ্যুৎবাবু এখন ভালো আছেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন।’ চলচ্চিত্র জগতের খবর, প্রদ্যুৎবাবু, বিমানবাবু ও বাবনবাবু মিঠুনের ‘ছায়াসঙ্গী’। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, মিঠুনবাবুর ছায়াসঙ্গী বলেই প্রদ্যুৎবাবু এত সহজে স্বাস্থ্যসাথীর টাকা পেয়েছেন। অন্তত দশজনের নাম জানি, যাঁরা স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা পাননি।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রদ্যুৎবাবু ৩১ মার্চ সকালে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী বাঁদিকের ধমনীতে ব্লক ধরা পড়ে। দরকার ছিল জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার। সেইমতো বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন শর্মা অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করে স্টেন্ট বসান। ১ এপ্রিল বিকেলে ছুটি পান।
চিকিৎসার জন্য ৬৬ হাজার টাকা এবং স্টেন্টের দাম বাবদ ৩১,৬৮৯ টাকা—সব মিলিয়ে ৯৭,৬৮৯ টাকার পুরোটাই মিলেছে প্রদ্যুৎবাবুর দু’বছরের পুরনো স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে। কোনও খরচ তাঁকে বহন করতে হয়নি। প্রসঙ্গত, ২০১৮-র ১৫ ডিসেম্বর প্রদ্যুৎবাবু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করান। ডাঃ শর্মা বলেন, উনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্টেন্ট বসিয়েছি। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি হয়। ভালো আছেন এখন।
মমতার ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ বিজেপির ঘুম কেড়েছে। জনমানসে এর ব্যাপক প্রভাব যাতে ভোটযন্ত্রে প্রতিফলিত না হয়, সেজন্য চেষ্টার কসুর করছে না বিজেপি। মমতার উদ্যোগকে নস্যাৎ করতে স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে শহরে এনে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়েছিল বিজেপির চিকিৎসক শাখা। এরই মধ্যে গোপীবল্লভপুরে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করান। ঝাড়গ্রামের দলীয় প্রার্থী ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীর পরিবার কার্ড করিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, মমতার ভূয়সী প্রশংসাও করেছে।