ভোটের বাজারে চাঙ্গা কাটোয়ার মুখোশ শিল্প
‘মুখের কথা একলা হয়ে রইল পড়ে গলির কোণে/ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে’। কবি শঙ্খ ঘোষের জনপ্রিয় এক কবিতার শেষ পঙতি এটি। কবিতার মতোই এখন ভোটের বাজারে চারিদিক শুধু মুখোশ আর মুখোশ। শুধুই বিজ্ঞাপন। ভোট যত এগচ্ছে, মুখোশের চাহিদাও তত বাড়ছে। বলছেন কাটোয়ার মুখোশ শিল্পীরা। তবে সে মুখোশ নিছক বাচ্চাদের খেলার বস্তু নয়। এ হলো ‘খেলা হবে’ মুখোশ। যে স্লোগান দলমত নির্বিশেষে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বঙ্গে। শাসকদল, বিরোধী দল সবাই বলছে ‘খেলা হবে’। আমজনতাও মজার ছলে আপন করে নিয়েছে এই স্লোগানকে। এবার মুখোশ শিল্পীরাও সেই স্লোগানকে হাতিয়ার করে বাজার দখলের লড়াইয়ে নেমেছে। দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় অনেকেই কাগজের মুখোশ তৈরি করেন। বিভিন্ন জন্তু, অসুর, কার্টুন চরিত্র প্রভৃতির কাগজের মুখোশ তৈরি করে বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করেন শিল্পীরা। এটাই তাঁদের আয়ের প্রধান পথ।
করোনার জেরে গত বছরের প্রায় পুরোটাই এইসব শিল্পীদের বাজার মন্দা গিয়েছে। মেলা হয়নি প্রায় কোথাওই। কিন্তু সেই ক্ষতিকে পুষিয়ে দিতে চলে এসেছে ভোট মেলা। বঙ্গ ভোটের বাজার এবার মাতাচ্ছে ‘খেলা হবে’ মুখোশ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতীক চিহ্ন আঁকা ‘খেলা হবে’ মুখোশের চাহিদা বাড়ছে। আর তাই ভোটের বাজার ধরতে দিনরাত এক করছেন কাটোয়ার মুখোশ শিল্পীরা।
পোশাকের জগতে গেঞ্জি থেকে শুরু করে কেক, মিষ্টিতেও ‘খেলা হবে’ স্লোগান জায়গা করে নিয়েছে। ছোট ছোট শিশুদের মুখেও খেলা হবে স্লোগান। তাই এই স্লোগানের জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করেই নিজেদের আয়ের পথ সুগম করতে চলেছেন মুখোশশিল্পীরা। তৃণমূল, বিজেপি বা সিপিএমের প্রতীক আঁকা কাগজের মুখোশে লেখা ‘খেলা হবে’ স্লোগান। এই মুখোশের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ইতিমধ্যেই প্রচুর বরাত এসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এই ‘খেলা হবে’ মুখোশ নেওয়ার জন্য শিল্পীদের বরাত দিচ্ছেন। করোনা আবহে টানা একবছর ধরে কারবার শিকেয় তুলে দেওয়া মুখোশ শিল্পীরা ‘খেলা হবে’ মুখোশ বিক্রি করে এবার দুটো পয়সার মুখ দেখবার আশা করছেন।
কাটোয়া শহরের হরিসভা পাড়ার বাসিন্দা মুখোশশিল্পী দীপঙ্কর দাস বলেন, বংশানুক্রমে আমরা মুখোশ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু আগেরবার করোনার জন্য সব শেষ হয়ে গিয়েছে। মেলা থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই আমাদের সংসার চালাতে হয়। মেলা বন্ধ থাকায় বিক্রি হয়নি। ঘরে প্রচুর মুখোশ জমে গিয়েছে। তবে এবার ভোটের বাজারে মুখোশের যা চাহিদা তাতে আশা করছি একটু হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। এবার ‘খেলা হবে’ মুখোশের চাহিদা বেশি। অনেক বরাত এসেছে।
শিল্পীরা প্রথমে মাটি দিয়ে ছাঁচ বানিয়ে মুখোশের অববয়ব আনেন। তারপর কাগজের মণ্ড আর আঠা দিয়ে ওই মাটির ছাঁচে বসিয়ে রাখতে হয়। ঘণ্টাখানেক পর মুখোশ তৈরি হয়ে যায়। এবার সেগুলি বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তুলে বাজারে বিক্রি হয়। এক একটি ‘খেলা হবে’ মুখোশ ২০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলকোটের এক মুখোশ বিক্রেতা বলেন, মুখোশ শিল্পে আর নতুন কেউ আসতে চাইছে না। বড় পরিশ্রম করতে হয়। সারাদিনে বড়জোড় ৭ থেকে ৮টি করে মুখোশ তৈরি হয়। এখন ‘খেলা হবে’ মুখোশের পাশাপাশি মোদি ও মমতার মুখোশের চাহিদাও বাড়ছে।
তবে, শেষ অবধি বাজিমাৎ করবে কোন মুখোশ? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষের মনে।