পুলিশ সুপারের রিপোর্টে উল্লেখই নেই সুজাতাকে বাঁশ নিয়ে তাড়া করার কথা
দিনভর খবরের শিরোনামে আরামবাগের (Arambag) তৃণমূল (TMC) প্রার্থী সুজাতা খাঁ(Sujata Mondal Khan)। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁকে বাঁশ নিয়ে তাড়া করেছিল বিজেপি(BJP) কর্মীরা। অথচ সেই ঘটনার কোনও উল্লেখই নেই পুলিশ সুপারের রিপোর্টে। কমিশনকে দেওয়া রিপোর্টে তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল-বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতহাতি হচ্ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুজাতা। ছোটখাটো জখমের খবর মিলেছে। বাকি নির্বিঘ্নেই ভোট মিটেছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার।
আরামবাগের আরাণ্ডিতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের কাছে পুলিস ও কেন্দ্রের আধাসামরিক বাহিনীর সামনেই তৃণমূলের মহিলা প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলকে বাঁশ, রড দিয়ে পেটানো হয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে যে সুজাতাদেবী ছিলেন বিজেপির নয়নের মণি তাঁকেই মঙ্গলবার ‘নরেন্দ্র মোদির জয়, অমিত শাহজির জয়’ ধ্বনি দিতে দিতে মাথায় গেরুয়া ফেট্টিধারীরা বেধড়ক পেটাল। এমনকী, তাঁর গলা তাক করে ছোড়া হয় হাঁসুয়া। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। লাঠির আঘাতে মাথা ফেটে যায় তাঁর সঙ্গী নিরাপত্তারক্ষীর। বাঁশ, লাঠি ও এলোপাথাড়ি ছোড়া ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হন বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী ও গ্ৰামবাসী। আরাণ্ডির দক্ষিণপাড়ার গ্ৰামবাসীদের ভিড়ে মিশে বিজেপির দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। যদিও বিজেপি নেতা বিমান ঘোষ বলেন, তৃণমূল প্রার্থী গিয়েই ওখানে আগুন লাগিয়েছেন। লাথ মেরে কারও ভাতের হাঁড়ি উল্টে দিলে তারা কী আদর করবে। হাঁড়ির গরম জল এক গর্ভবতী মহিলার গায়ে লেগেছে। হেরে যাবেন, তাই মিডিয়ার লাইমলাইটে আসার চেষ্টা করছেন।
মঙ্গলবার সকালে আরামবাগে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক তৃণমূল কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ আসতে থাকে। বেশ কয়েক জায়গায় তৃণমূলের এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। খবর পেয়েই সকাল ৭টার সময় পারুল রামকৃষ্ণ হাইস্কুল ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে যান সুজাতা। আরামবাগের গৌরহাটির ২৩০নম্বর বুথে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি পলাশ রায়ের গাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়েই কমিশনে নালিশ জানান। আরাণ্ডি সাউথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটারদের বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানে সুজাতা যেতেই ফাতিমা বেগম, শেখ জাহির আব্বাস তাঁকে বলেন, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে। মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ১০টা বেজে গেল কয়েকজন মাত্র ভোট দিয়েছে।
সুজাতা মহল্লা পাড়ার বাসিন্দাদের নিয়ে মাঠ দিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়ার উদ্যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরামবাগ থানার আইসি পার্থ সারথি হালদার ও আধাসামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা রক্ষীরা। বুথের কাছাকাছি যেতেই বিজেপির লোকজন তেড়ে আসে। মাঠের মধ্যেই বাঁশ, লাঠি, রড, হাঁসুয়া নিয়ে আক্রমণ করে। বাঁশ ও রডের আঘাতে জমির আলে লুটিয়ে পড়েন সুজাতাদেবী। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে সিকিউরিটি নুরুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। সুজাতাকে ধরাধরি করে আরাণ্ডির মহল্লা পাড়ায় নিয়ে আসা হয়।
সেই সময় তৃণমূল প্রার্থীকে তাড়া করে মহল্লা পাড়ায় ঢোকার চেষ্টা করে বিজেপির দুষ্কৃতীরা। তাদের থামাতে গেলে পুলিসের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। প্রতিবাদে সুজাতা মহল্লাপাড়াতেই ধর্নায় বসেন। আরাণ্ডি-১পঞ্চায়েতের ২৬৩ ও ২৬৩+এ বুথের পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান।
তৃণমূল প্রার্থী বলেন, পুলিস ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার জন্যই বিজেপি আক্রমণ করার সাহস পেয়েছে। আধলা ইট ও গলা লক্ষ্য করে হাঁসুয়া ছোড়ে। কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচেছি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে শেখ পলাশ নামে এক তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন। ওঁর হাত ভেঙে গিয়েছে। একাকী নারী লড়াই করছি বলেই আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে বিজেপি। ওরা বলছিল, আমাকে মেরে দিলেই আরামবাগে জিতে যাবে। কিন্তু, আমি এক ইঞ্চিও জমি ছাড়িনি। ঘটনার খবর পেয়ে যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে খবর নিয়েছেন।
আরাণ্ডি থেকে ফেরার পথে ডিহিবাগানানে যান সুজাতা মণ্ডল। সেখানে তাঁর গাড়ির উপর ফের আক্রমণ চালানো হয়। তাঁর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। সুজাতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আরামবাগে দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে রেখেছিল বিজেপি। প্রশাসনকে বহুবার বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। গণতন্ত্রকে এদিন হত্যা করা হয়েছে। ভোটেই মানুষ এর জবাব দেবে।