তিন কেন্দ্রে দুই সেতু, কোচবিহারের আশাবাদী তৃণমূল
মা কামতেশ্বরী এবং জয়ী। এই দুই সেতুই কোচবিহারের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে অক্সিজেন জোগাচ্ছে তৃণমূলকে। প্রথমটি মানসাই নদীর উপর। যুক্ত করেছে সিতাই ও দিনহাটাকে। দ্বিতীয়টি তিস্তার উপর, জুড়েছে হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জকে। আরও বিশদে বললে, এই সেতুর সৌজন্যে মেখলিগঞ্জ থেকে এখন অনায়াস যাতায়াত জলপাইগুড়িতে। এর আগে সিতাইয়ের বাসিন্দাদের দিনহাটা যেতে হলে মাথাভাঙা হয়ে অন্তত ৭০-৮০ কিমি ঘুরতে হতো। সেই দিন এখন অতীত। একইভাবে হলদিবাড়ি কোচবিহার জেলার অন্তর্গত হলেও সরাসরি কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। জলপাইগুড়ি দিয়ে কয়েকশো কিমি ঘুরে তবেই কোচবিহারে যেতে হতো হলদিবাড়ির বাসিন্দাদের। নতুন এই দুই সেতুই এখন মেখলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলকুচিতে তৃণমূলের প্রচারের মূল হাতিয়ার। মেখলিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারীর দাবি, স্বাধীনতার পর থেকেই এই সেতু নির্মাণের দাবি ছিল এলাকার মানুষের।
অবশেষে তা পূরণ করেছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান হওয়ায় খুশি এখানকার মানুষ। এছাড়াও চ্যাংড়াবান্ধা উন্নয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করাই তাঁর লক্ষ্য। উল্টোদিকে, মেখলিগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী দধিরাম রায়ের দাবি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তির জন্য এই প্রান্তিক এলাকার উন্নয়নে কেন্দ্র যে টাকা দিয়েছে, তা দিয়েই এই সেতু তৈরি হয়েছে। তাই জয়ী সেতুর আসল কারিগর কে, তা নিয়ে দুই যুযুধানে লড়াই তুমুল। যদিও সাধারণ মানুষ সেতু পেয়েই খুশি। মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা কৃষ্ণ পাল বলেন, এই সেতু হওয়ায় যে কী সুবিধা হল, বলে বোঝাতে পারব না। এতদিন কোচবিহার ঘুরে জলপাইগুড়ি যেতে হতো। এখন তা অনেক তাড়াতাড়ি এবং সহজ হয়ে গেল। একইভাবে হলদিবাড়ির বাসিন্দা সঞ্জয় প্রধান বলেন, জেলা সদরে যেতে হতো অন্য জেলা ঘুরে। এবার সরাসরি যাওয়ার রাস্তা হল। উল্লেখ্য, এবার এই কেন্দ্রে তিন ‘সিংহ’-এর লড়াই নিয়ে খুব আগ্রহী বাসিন্দারা। ফরওয়ার্ড ব্লকের (প্রতীক সিংহ) এখানকার প্রার্থী গোবিন্দচন্দ্র রায়। অন্যদিকে, তৃণমূল এবং বিজেপির প্রার্থী পরেশচন্দ্র অধিকারী এবং দধিরাম রায় দু’জনেই এক সময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন। তাই সব মিলিয়ে লড়াই জমজমাট।
অন্যদিকে, সিতাইয়ের ক্ষেত্রেও মেখলিগঞ্জের মতো কামতেশ্বরী সেতু এখন অ্যাডভান্টেজে নিয়ে দিয়েছে তৃণমূলকে। এই সেতু তৈরির ফলে সিতাই এবং শীতলকুচির মানুষকে আর মাথাভাঙা ঘুরে দিনহাটা যেতে হবে না। সিতাইয়ের হেড কোয়ার্টার দিনহাটা। অন্যদিকে, শীতলকুচি থেকে ব্যবসার কাজে প্রতিদিন বহু মানুষ দিনহাটা আসেন। এরকমই এক ব্যক্তি অপরেশ অধিকারী বলেন, এর ফলে শুধুমাত্র আর্থিকভাবে নয়, সময়ও বাঁচবে অনেক। সিতাইয়ের বাসিন্দা কমল রায় বলেন, অনেকদিনের দাবি পূরণ হল। তাঁরা সরকারের কাজে খুশি। সিতাইয়ের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া এখন এই সেতুকেই হাতিয়ার করে প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর দাবি, স্বাধীনতার পর থেকে এই সেতু নির্মাণের দাবি ছিল। কংগ্রেস, বামেরা যা করতে পারেনি, তৃণমূল তা করে দেখাল। লোকসভা ভোটের নিরিখে সিতাই তৃণমূলের বেশ শক্ত ঘাঁটি। এখন দেখার, ভোটের ফলাফলে কী ঘটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, বিজেপি’র এক নেতা এখানে নির্দল প্রার্থী। উল্টোদিকে, তৃণমূল শিবিরে সম্প্রতি ভাঙন ধরিয়েছে বিজেপি। তাই কে এগিয়ে, বলা যাচ্ছে না। তবে বেশ ভালো লড়াই হবে। সিতাইয়ের বিজেপি প্রার্থী দীপক রায়ের দাবি, সর্বত্র তৃণমূলের সন্ত্রাস চলছে।
একইভাবে শীতলকুচিতেও গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের লিড ছিল। তাই এই আসন ধরে রাখতে এবার দীর্ঘদিনের প্রার্থী হিতেন বর্মনকে বসিয়ে জেলা সভাপতি পার্থপ্রতীম রায় নিজেই দাঁড়িয়েছেন ঘাসফুলের প্রতীকে। পার্থবাবু বলেন, এখানকার খলিশাবাড়িতে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হচ্ছে। মানুষ উন্নয়নের কাজ দেখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দেবেন। যদিও উল্টোদিকে, বিজেপি প্রার্থী বরেনচন্দ্র বর্মন বলেন, এখানে পঞ্চানন বর্মার জন্ম। প্রথম ক্যাম্পাস এখানে হল না কেন? শীতলকুচিতে এবার কী হবে, সেই প্রশ্নে স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় বর্মন বলেন, বলা যাচ্ছে না দাদা। তৃণমূল প্রচুর কাজ করেছে। ওদেরই থাকা উচিত। কিন্তু, বহু মানুষ বদল চাইছে।
এখানে হিতেনবাবু প্রার্থী না হওয়ায় অনেক পুরনো তৃণমূল কর্মী বসে গিয়েছেন। এটা ভোট বাক্সে প্রভাব ফেললে, ফলাফল অন্যও হতে পারে। তবে সিতাই থেকে জামালদহ, খলিসাবাড়ি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা— বহু মানুষের দাবি, সেতুর সুফল নিয়ে তৃণমূল কার্যকরী প্রচার করতে পারছে না। এই সুযোগে বিজেপি ফায়দা লুটতে পারে। জামালদহের শিবু রায় বলেন, দিদি যা করেছেন, তাতে জয় ছাড়া কিছু ভাবারই কথা নয় তৃণমূলের। তবে নিচুতলার দাদারা সব গণ্ডগোল করে দিচ্ছে। দেখা যাক কী হয়!