‘রাজনীতি সব সম্ভাবনার শিল্প’ অধীরের মন্তব্যে জল্পনা
যাত্রাপথের ধারেকাছেই চলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) নির্বাচনী জনসভা। একটি নয়, দু’-দু’টি। তাও আবার যাদবপুর(Jadavpur) ও টালিগঞ্জের(Tollygunge) মতো দুই বহুচর্চিত এবং রাজনৈতিক সচেতনসম্পন্ন কেন্দ্রের তৃণমূলের (TMC) দুই হেভিওয়েট প্রার্থীদর সমর্থনে। কিন্তু সেই আবহেই বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকুরিয়া থেকে গড়িয়া মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিমি রাস্তাজুড়ে চলল বাম-কংগ্রেস(Left Congress) তথা সংযুক্ত মোর্চার(Sanjukta Morcha) মেগা রোড শো। প্রায় একই তল্লাটে দুই যুযুধান প্রতিপক্ষের বড় মাপের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে যাতে অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে সেজন্য আগাগোড়া তৎপর ছিল বিরাট পুলিস বাহিনী। তবে দু’ঘণ্টা পর সাড়ে ৭টা নাগাদ মোর্চার রোড শো শেষ হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে তারা।
এদিন দক্ষিণ তল্লাটের চার কেন্দ্রের চার প্রার্থীর জন্য আয়োজন করা হয় এই রোড শো। যাদবপুরের সুজন চক্রবর্তী, রাসবিহারীর আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, কসবার শতরূপ ঘোষ এবং টালিগঞ্জের দেবদূত ঘোষের সমর্থনে এই রোড শো’র রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়াতে আগাগোড়া হাজির ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। ছিলেন বাদশা মৈত্র, সব্যসাচী চক্রবর্তী, অনীক দত্ত, চন্দন সেন সহ টলিউডের একঝাঁক বিশিষ্ট বামমনস্ক ব্যক্তিত্ব। বাকি সকলে আগাম এসে গেলেও অধীরের দেরির কারণে নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা পর শুরু হয় কর্মসূচি। এমনকী, মোর্চার বড় শরিক সিপিএমের কয়েক হাজার সমর্থকের তুলনায় কংগ্রেসের হাজিরা নগণ্য হলেও কোনওভাবেই তাল কাটেনি মোর্চার এই ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে। একাধিক বর্ণাঢ্য ট্যাবলো, তালবাদ্য, ফেস্টুন, লাল-তেরঙা বেলুনের ভিড়ে পাশাপাশি জোড়া খোলা জিপে প্রার্থীদের নিয়ে বিমান-অধীররা শুরু করেন শোভাযাত্রা। যাদবপুর থানা, ৮বি মোড়, সুলেখা, কৃষ্ণা গ্লাস, বাঘাযতীন মোড়, পাটুলি ক্রসিং হয়ে যত এগিয়েছে এলাকার বাম কর্মী-সমর্থকরা ততই ভিড় বাড়িয়েছে মিছিলের। যাত্রাপথের মাঝে একাধিক জায়গায় সিপিএম সমর্থকদের আব্দারে থামতে হয় জোড়া জিপকে। শাঁখ বাজিয়ে, ফুল ছুড়ে মহিলারা স্বাগত জানান প্রার্থীদের। এদিনের মহামিছিলের সিংহভাগ অংশগ্রহণকারী ছিল বয়সে নবীন। গত দু’টি বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে একই পথে অনুষ্ঠিত এই ধরনের রোড শো’য়ে যে ছবি ধরা পড়েনি।
এদিকে, এদিন কলকাতা প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে অধীর অবশ্য ভোটের ফল প্রকাশের পর বিজেপিকে ঠেকাতে প্রয়োজনে তৃণমূলের সঙ্গে মোর্চা হাত মেলাবে কি না সে ব্যাপারে কিছুটা ধন্দ জিইয়ে রাখেন। তিনি বলেন, এই ধরনের কষ্টকল্পিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এখন নয়। রাজনীতি হল সব ধরনের সম্ভাবনার শিল্প। এখন যা অবস্থা তাতে বিজেপি বা তৃণমূলের দ্বিদলীয় তত্ত্ব আর খাটছে না। সংযুক্ত মোর্চা এই ভোটে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আমরা নবান্ন দখলের লক্ষ্য নিয়ে এগচ্ছি। তিন দফার ভোটে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে তৃণমূল এবার হারছেই। সেটা নন্দীগ্রামের ভোটের দিনই বোঝা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে। তাই দেখা যাবে হয়তো মোর্চার সাহায্য চাইবেন দিদি। যে কংগ্রেসকে তিনি একদিন জাদুঘরে পাঠানোর কথা বলেছিলেন এখন সেই দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে বিজেপিকে ঠেকানোর জন্য আর্জি জানাচ্ছেন। এটা আমাদের নৈতিক জয়। তৃণমূল সমর্থকদের বলছি, পাণ্ডা ধরে মন্দির দর্শনে যাবেন না। দিদির মনোবাঞ্ছা পূরণে সরাসরি কংগ্রেস তথা মোর্চাকে সমর্থন করুন।