ভোটের জন্য রাস্তা থেকে উধাও ৮৫ শতাংশ বাস, মাথায় হাত মানুষের
সুষ্টু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে এবার রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী( Central Force) এসেছে বাংলায়(West Bengal)। সেই সঙ্গে করোনার(Covid 19) জেরে বুথের সংখ্যাও একলাফে বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার। নির্বাচন কমিশনের (ECI) জোড়া এই দাওয়াইয়ে ঘুম ছুটেছে পথচলতি মানুষের। কারণ, সুদীর্ঘ আট দফা ভোটে এই বিরাট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভোটকর্মীদের বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হাজার হাজার বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। সরকারি পরিবহণের পাশাপাশি রাস্তা থেকে উঠে গিয়েছে সিংহভাগ বেসরকারি বাস। বেসরকারি বাস মালিকদের বক্তব্য, প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস ভোটের কাজে উঠে গিয়েছে। লাটে উঠেছে যাত্রী পরিষেবা।
সবচেয়ে করুণ দশা মহানগরী কলকাতার। কেননা, এই শহরেই সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের সবচেয়ে বেশি বাস চলে। ফলে অন্যান্য যেসব জেলায় বাস অপেক্ষাকৃত কম, ঘাটতি মেটাতে কলকাতা থেকে হাজার হাজার বাস তুলে সেইসব জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী কাল, শনিবার টালিগঞ্জ, যাদবপুর সহ একাধিক কেন্দ্রে ভোট। তার জেরে বাস তুলতে কলকাতা পুলিস জুলুমবাজি ও অত্যাচার শুরু করেছে বলেও মালিকদের অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, বাবুঘাট, নবান্ন, বালিগঞ্জ আইটিআইয়ের সামনে দেখা গেল, শয়ে শয়ে বাস দাঁড়ানো। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া সহ একাধিক জেলার ভোটের জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই এইসব বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট। তারপর বাকি রয়েছে আরও চার দফা। আর শনিবারের পরবর্তী ভোট ১৭ এপ্রিল। অর্থাৎ, মাঝের ছ’দিন এই বিরাট সংখ্যক বাস যাত্রী পরিষেবায় ব্যবহৃত হবে না। এই ধারা বজায় থাকবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এই মুহূর্তে রাজ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ বেসরকারি বাস ভোটের কাজে উঠে গিয়েছে। কারণ, এবারই রাজ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী এসেছে ও বুথ তৈরি হয়েছে। স্বভাবতই বাহিনীর জওয়ান ও ভোটকর্মীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দিতেই রাস্তায় বাস দেখা যাচ্ছে না, দাবি তপনবাবুর।
একই বক্তব্য সিটি সুবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহার। তাঁর দাবি, শুধুমাত্র উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য সংগঠনের অধীনে থাকা ৪৭৩টি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে কলকাতা পুলিস অমানবিক কায়দায় যেভাবে মাঝরাস্তায় যাত্রী নামিয়ে বাস তুলছে, তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন টিটুবাবু। তাঁর বক্তব্য, বেসরকারি বাসের চালক-কন্ডাক্টররা দিন আনেন দিন খান। এভাবে আগাম না জানিয়ে বাস তুলে নিলে তাঁদের উপার্জনে টান পড়ে। অনেকের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। তার বদলে আগে থেকে জানিয়ে ২৪ কিংবা ৪৮ ঘণ্টার নোটিস দিয়ে বাস তুললে এই সমস্যা হয় না। তবে ৬ এপ্রিল রাজ্য পরিবহণ দপ্তর ভোটের কাজে যুক্ত বাসের ভাড়া কিছুটা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের মজুরি কিংবা খোরাকি ১৭০ টাকাই রয়েছে। বাস মালিকদের বক্তব্য, এই সামান্য টাকায় সারাদিনের খাওয়া ও অন্যান্য খরচ সামলে প্রায় কিছুই থাকে না পরিবহণ শ্রমিকদের। যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে।