বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষোভ ডোমজুড় জুড়েই
‘মাকাল ফল। বাইরেটা সুন্দর, ভেতরটা দেখলে ফল বলতে কষ্ট হয়।’ হাওড়ার ডোমজুড়(Domjur) বিধানসভা নির্বাচনের গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী সম্পর্কে এই একটি শব্দই এখন বহুল ব্যবহৃত। আম জনতার বড় অংশের মুখে মুখে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই পোস্টার পড়েছে দলবদলু প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) দশ অনিয়ম নিয়ে। ডোমজুড়ের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে দুবাই। উঠে আসছে উলুবেড়িয়ার বিশেষ একটি রিসর্টের নাম। একদা ‘সততার পোস্টার বয়’ হতে চাওয়া ব্যক্তির ঝুলি থেকে বেরচ্ছে নানা রঙের বেড়াল। এমনটাই বলছে, ডোমজুড়ের বাসিন্দা মহল। আবার একাংশের মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রবাদ আউড়াচ্ছেন। বলছেন, যা রটে তা কিছুটা তো বটে!
ঘটনা প্রবাহের নতুন মোড় বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের। দলবদলু রাজীববাবুকে প্রার্থী করা নিয়ে দলে অসন্তোষ ছিলই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ওই ব্যক্তিকে জামাই আদর দেওয়া ভালো চোখে দেখেনি দলের বড় অংশ। কিন্তু প্রকাশ্যে বিরোধ করে চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার রাস্তাতেও হাঁটেননি স্থানীয় নেতারা। সঠিক সময়ের জন্য ক্ষোভ চেপে রেখেছিলেন। সেদিনের সেই অস্বস্তি এখন বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে। নেতৃত্ব একে ‘রাজনৈতিক কুৎসা’ বলে পরিস্থিতি সামাল দিলেও আমজনতার ক্ষোভটা গেরুয়া শিবির ভালোই টের পাচ্ছে। আর জনমানসের পরিবর্তন বুঝতে পেরে তেড়ে খেলছে তৃণমূল কংগ্রেস। ডোমজুড়ের তৃণমূলপ্রার্থী কল্যাণ ঘোষ বলছেন, ‘জন্মাবধি বিশ্বাসঘাতক। গুজরাতে যে কোম্পানিতে চাকরি করত, সেখানে কাটামানি নিয়ে শিল্পপতি সেজেছিলেন। সততার মুখ হয়ে উঠতে চাওয়া ওই ব্যক্তি শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে গুন্ডাদের জড়ো করে ভোট করেছে। ওঁর অনিয়মের ডালা এখন খুলে গিয়েছে।’ স্থানীয় সাংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্যনেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলায় একটা অশুভ অক্ষ তৈরি হয়েছিল। একজন মেদিনীপুরের, আর একজন উত্তরপাড়ায় ছিলেন। তৃতীয়জন ডোমজুড়ের। দল যখন টের পেয়েছে, ব্যবস্থা নিয়েছে। আর হাটে হাঁড়ি ভেঙেছে বুঝেই বিজেপিতে সিঁদ কেটে ঢুকেছে।’
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘আমি যদি এতই অনিয়ম, বেনামি সম্পত্তি করেছি, তবে শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে দলে রাখার চেষ্টা কেন হল? দলের জেলার কর্মী থেকে শীর্ষ নেত্রী—কুৎসা করে প্রত্যেকেই নিম্নরুচির পরিচয় দিচ্ছেন। হলফনামার বাইরে আমার সম্পত্তি আছে প্রমাণ হলে শাস্তি মাথা পেতে নেব। চাকরি নিয়ে অনিময়ের প্রতিবাদ করেছিলাম। তার তথ্য আছে। আর হ্যাঁ, কোনও বিজেপি কর্মীর মধ্যে অস্বস্তি নেই। ওগুলো তৃণমূলের মনগড়া বিজেপি। মানুষ আমাকে চেনে।’
বিতর্ককে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলে ‘অনুপ্রবেশ’ রাজীববাবুর। ২০১১ সালে তিনি প্রার্থী হতেই ক্ষোভ শুরু হয়েছিল ডোমজুড়ে। সেই শুরু বিতর্কের। এরপর নানা সময়ে দলের অন্দরে বিতর্কে জড়িয়েছেন একদা তৃণমূলের মন্ত্রী। সেচদপ্তর থেকে তাঁকে সরে আসতে হয়েছে বনদপ্তরে। অভিযোগ, পরিবারের একাধিক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার সঙ্গে করেকম্মে খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। উলুবেড়িয়ার একটি বিশেষ রিসর্ট নিয়ে যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাও তাঁরই এক আত্মীয়ের বলে জনশ্রুতি।
আরও অভিযোগ, সামাজিক মাধ্যমে ‘বাণীময়’ হয়ে ওঠা রাজীববাবুর সম্পদের পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছে। হাওড়ায় নামে বেনামে জমির সঙ্গে দুবাইতে টাকার লেনদেন, কলকাতায় একাধিক সম্পদ তৈরি করার অভিযোগ ঘিরে ভোট মরশুম সরগরম। গোটা ঘটনায় ডোমজুড়ের আমজনতার বড় অংশ স্তম্ভিত। নানা সময়ে আউড়ানো শুদ্ধিকরণের বুলির এখন অন্য অর্থ হচ্ছে। বাসিন্দারা বলছেন, ‘এ যে সেই কারও এক মায়ের বড় গলার মতো হল!’ আর বিজেপির আদি সমর্থকরা? দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।