ঢাকঢোল পিটিয়ে টিকা উৎসব, শুরু হল ঘাটতি দিয়ে
ভ্যাকসিনের ঘাটতির মধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হল টিকা উৎসব (vaccination)। প্রধানমন্ত্রী এই টিকা উৎসবকে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে আরও একটি মহাসংগ্রাম বলে চিহ্নিত করেছেন। করোনা মোকাবিলায় মানুষকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিচ্ছন্নতা বজায় অনুরোধ জানিয়ে ব্লগ লিখেছেন মোদি। তবে ভ্যাকসিন উৎসবে কাঁটার মতো বিঁধছে প্রতিষেধকের ঘাটতির অভিযোগ। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ ও কেরল—এই পাঁচটি রাজ্যেই সংক্রামিতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশের মোট আক্রান্তের ৭০ শতাংশের বেশি এই পাঁচটি রাজ্যের। করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। কিন্তু এই সব রাজ্যগুলিরও অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় ডোজ কম। ফলে টিকা উৎসব হচ্ছে ‘নাম কা ওয়াস্তে’।
রবিবার ব্লগে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন তিনটি মন্ত্র। প্রথমত ‘ইচ ওয়ান, ভ্যাকসিনেট ওয়ান’। অর্থাৎ, প্রত্যেককে টিকার জন্য উৎসাহিত করা। দ্বিতীয়ত, ‘ইচ ওয়ান, ট্রিট ওয়ান’। অর্থাৎ অন্যের চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তৃতীয়ত, ‘ইচ ওয়ান, সেভ ওয়ান’। অর্থাৎ মাস্ক পরুন। নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে বাঁচান। এদিনও তিনি বলেছেন, কেউ আক্রান্ত হলে মাইক্রো কন্টেইনমেন্ট জোন তৈরি করতে হবে। ভারতের মতো জনঅধ্যুষিত দেশে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে এটাই একমাত্র অস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী যখন ভ্যাকসিনেশনের পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন প্রয়োজনীয় টিকার অভাবের কথা বলছে কমবেশি দেশের প্রতিটি রাজ্যই। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা মহারাষ্ট্রে। অথচ সেখানেও টিকার চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বেসরকারি কেন্দ্রে টিকাকরণ কার্যত বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেছেন, মাত্র পাঁচ দিনের টিকা রয়েছে। রাজস্থানের অশোক গেহলট বলেছেন, দু’দিনের বেশি টিকার ডোজ নেই। দিল্লিতে টিকা চালানো সম্ভব ১০ দিন। এদিনই আপের নেতা রাঘব চাড্ডা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আগে প্রতিটি দেশবাসীর টিকার ব্যবস্থা করা হোক। তারপরে বিদেশে টিকা পাঠাক কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গেও টিকাকরণের চিত্র বেশ খারাপ। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, টিকাই নেই, তো আবার টিকা উৎসব! সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার হিসেব অনুযায়ী, এদিন ৩ হাজার ১৪৯টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা পেয়েছেন মাত্র ৫১ হাজার মানুষ। তার মধ্যে ২০ হাজার কোভ্যাকসিন এবং বাকি ৩১ হাজার কোভিশিল্ড। রবিবারও টিকা ভোগান্তি অব্যাহত ছিল। কলকাতা পুরসভায় মাত্র ৪০টি কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। অথচ দেওয়ার কথা ছিল ১০০টি কেন্দ্র থেকে। টিকার সরবরাহ না থাকায় বহু বেসরকারি হাসপাতাল টিকাদান বন্ধ রেখেছে। দপ্তরের এক পদস্থ কর্তা জানান, এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে টিকা পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছে আজ চার লক্ষ টিকা আসছে।
বিভিন্ন রাজ্যের এহেন অভিযোগের মধ্যেও স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, ১০ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৮৫ দিনে এই কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এটি সমগ্র বিশ্বেই রেকর্ড। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরল, গুজরাত, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গে ৬০ ভাগের বেশি ডোজ পাঠানো হয়েছে। দেশে ভ্যাকসিনের কোনও ঘাটতিও নেই। বরং রাজ্যে রাজ্যে যে ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে, তা বন্ধ করতে জোর দেওয়া হোক। দেশে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাপিয়েছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা এদিন রেকর্ড ১১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ লক্ষ ১৭ হাজার ছিল সর্বোচ্চ সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা।
করোনার (Corona) এই কঠিন পরিস্থিতির কারণেই রবিবার রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন এবং তার উপাদান বিদেশে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, আচমকা যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ইঞ্জেকশনের চাহিদা বাড়বে। তাই দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আপাতত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল।