রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ! শীতলকুচিতে শেষ বিদায় নিহতদের
আমতলির ইতিহাসে অভিশপ্ত হয়ে থাকল দিনটি। ভোট দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে গ্রামের চার তরতাজা যুবকের মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের যাবতীয় আক্রোশের লক্ষ একজনই, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। ফুঁসছে গোটা রাজ্য। তৃণমূল সুপ্রিমো শনিবারই প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে রবিবার রাজ্যজুড়ে পালিত হয়েছে কালা দিবস। কালো ব্যাজ পরে, মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি উঠেছে অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি। এভাবে গুলি চালানো হল কেন? প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে এসেছে আমতলি থেকে কলকাতায়।
এদিন সকালে আমতলি গ্রামে ঢুকতেই কানে এসেছে কান্নার রোল। ঘটনার পর থেকে এদিন দুপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ বাড়িতেই উনুন জ্বলেনি। শনিবারের সেই বীভৎস দৃশ্য এখনও ভুলতে পারছেন না বাসিন্দারা। বাড়ির পাশে এক গাছের নীচে চুপচাপ বসেছিলেন গুলিতে নিহত মনিরুজ্জমানের এক দাদা। সাংবাদিক পরিচয় শুনেই কান্নাভেজা গলায় উঠে এল একটাই প্রশ্ন, ‘বলুন তো, এর কী কোনও প্রয়োজন ছিল?’ এদিন সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন তিনি। বললেন, ‘আমিদুলের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। ওঁর সামনে দাঁড়াতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের পাশে রয়েছেন। এটাই পাওনা।’
স্বজন হারানোর বেদনা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমতলিকে। সকালে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতাল মর্গ থেকে দেহ আসতেই গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছিল অভিশপ্ত সেই বুথের সামনে। আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে পরপর শায়িত দেহগুলি দেখে কাঁদতে কাঁদতেই মহিলারা বলে ওঠেন, মায়ের কোল খালি করে দেওয়া কেন্দ্রের মোদি সরকার এই বাংলায় দরকার নেই। আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র থেকে দক্ষিণে ৪০০ মিটার দূরে বাড়ি মনিরুজ্জমানের। তিন ছেলের মধ্যে তিনিই বড়। দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। দেড় মাসের শিশুকন্যা কোলে নিয়ে তাঁর স্ত্রী রাহিলা বিবি কেঁদে ভাসাচ্ছেন। বাবা আমজাদ হোসেন জানালেন, বড় ছেলে শিলিগুড়িতে কাজ করে। দু’দিন আগে বাড়ি ফিরেছে ভোট দেওয়ার জন্য। সেটাই কাল হল। ওই জওয়ানদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা।
পাশাপাশি বাড়ি আমিদুল মিঞা ও সামিয়ুল হকের। আমিদুলও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করত। লকডাউনের পর থেকে বাড়িতেই। ঘরে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী আছিমা বিবি ন’মাসের গর্ভবতী। স্বামীর মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে ঘনঘন মূর্ছা যাচ্ছেন। অভিশপ্ত বুথ থেকে কিছুটা দূরে বাড়ি নুর আলম হোসেনের। বাবা-মা বিহারের ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছেন। ভোট দিতেও আসেননি। এক দিদির সঙ্গে বাড়িতেই ছিল নুর আলম। বুথের পাশের রাস্তা দিয়ে নিজেদের বোরো ধানের খেত দেখতে যাচ্ছিল সে। তখনই আচমকা গুলি লাগে। বিকেলে গ্রামেরই এক কবরস্থানে শেষকৃত্য হয় চারজনের। সেখানে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জেলা ও অঞ্চল স্তরের নেতারা। এসেছিলেন সিপিএমের শীতলকুচির প্রার্থী সুধাংশু প্রামাণিক।
শীতলকুচির (Sitalkuchi) পাঠানটুলি এলাকায়ও ছিল শোকের আবহ। সেখানেও ভোটের লাইনে তরতাজা যুবক আনন্দ বর্মনের মৃত্যু কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না বাসিন্দারা। কোচবিহারের ঘটনার প্রতিবাদে এবং অমিত শাহের ইস্তফার দাবিতে এদিন ১১,৭০০টি ছোট-বড় মিছিল করেন তৃণমূল কর্মীরা। মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাজ্যের শাসকদল ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীরা হাজির ছিলেন।