কেন্দ্রীয় বাহিনীর ‘সক্রিয়তা’য় উদ্বেগে কলকাতা
নির্বাচনের চতুর্থীতে প্রাণ গেল চারজনের। বাকি রয়েছে আরও চার দফার ভোট। শোনা যাবে ভারী বুটের শব্দ। হাতে থাকবে বন্দুক। শনিবার উত্তরবঙ্গের ঘটনার পর এ শহরের ভোটার থেকে আমজনতার বক্তব্যে উঠে এল ‘আতঙ্কের কথা’। তাঁরা বলছেন, দেশের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের অবদান কোনওদিন অস্বীকার করা যাবে না। তাঁদের কুর্নিশ। কিন্তু নির্বাচনের পরিমণ্ডলে চারজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এনেছে একাধিক প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ভোটাররা।
শনিবার চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ চলাকালীন কোচবিহারের শীতলকুচি (Sitalkuchi) বিধানসভার একটি বুথে সিআইএসএফের (CISF) ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের। যে ঘটনার পর উত্তাল হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। এখনও চার দফার ভোট বাকি। শীতলকুচির ঘটনা পরবর্তী ভোটের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ভোটাররা বলছেন, এখনও চার দিনের ভোট বাকি আছে। ফলে আরও সচেতন হওয়া উচিত কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিস, নির্বাচন কমিশনের। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার ডাঃ অঞ্জন চট্টরাজের কথায়, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হবে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবে, এটাই কাম্য। কিন্তু শীতলকুচির ঘটনার পর আমি সত্যিই আতঙ্কিত। আমার ছেলে ভুবনেশ্বরে পড়াশোনা করে। ভোট দিতে একদিনের জন্য আসছে। ছেলের বন্ধুরা বলছিল, যাচ্ছিস যা, ঠিকঠাক ফিরবি তো? অঞ্জনবাবুর প্রশ্ন, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, জলকামান ইত্যাদি কি ব্যবহার করা যেত না? আর আত্মরক্ষার প্রশ্নই ওঠে, তাহলে শূন্যে গুলি বা পায়ের নীচের চালানো হল না কেন?
প্রায় একই সুর মানিকতলা কেন্দ্রের ভোটার অমলকুমার দে’র। তিনি বললেন, একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আবার এমন হলে আমার স্ত্রীই হয়তো বলবেন, আর ভোট দেওয়ার দরকার নেই। বাবা বলবেন বুথে যেতে হবে না। অমলবাবুর কথায়, কতজন ভোটার ওই বুথে ঘটনার সময় ছিলেন, তাঁদের হাতে আদৌ কি কোনও অস্ত্র ছিল, গুলি চলল কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার।
কেরল, তামিলনাড়ু, অসমের ভোট নিয়ে যতটা না খবর হয়েছে, তার থেকে গোটা দেশের বেশি নজর বাংলার নির্বাচন নিয়ে। দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার অপূর্ব মজুমদারের কথায়, শীতলকুচির ঘটনার পর আমি ভীষণভাবে আতঙ্কিত। জওয়ানরা লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করতে পারতেন কিংবা বন্দুক উঁচিয়ে ধরলেই তো মানুষ ভয় পেয়ে যান, তাহলে গুলি চালাতে হল কেন? ভোটারদের কথায় উঠে এসেছে, রক্ত দেখতে চায় না বাংলা। বালিগঞ্জের ভোটার শাহিল ওয়ারসি, রাসবিহারী কেন্দ্রের ভোটার বীথি বসুর গলাতেও আতঙ্কের সুর। তাঁদের বক্তব্য, ভোটার কার্ড হাতে বুথে যাব। ভোট দেব। এর বাইরে কিছু চাই না।
শহরের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা বর্ষা চট্টোপাধ্যায় বলেন, শীতলকুচিতে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। সল্টলেকের বাসিন্দা তথা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শুভ্রদীপ রায়চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচন অত্যন্ত ঘটনাবহুল। শনিবারের ঘটনা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।