ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বিজেপির
ষষ্ঠ দফাতেও ভোটপ্রার্থীদের মধ্যে ফৌজদারি মামলা (criminal cases) থাকার নিরিখে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। প্রার্থীদের হলফনামাগুলি বিশ্লেষণ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ সোমবার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার থেকে এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই দফার ৪৩ জন বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির নানা ধারায় ফৌজদারি মামলা চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এব্যাপারে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তাদেরও ২৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সিপিএমের ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। এই রিপোর্ট থেকে আরও জানা গিয়েছে, এই দফার প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন হলফনামায় জানিয়েছেন যে তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রয়েছে। ধর্ষণের মামলা রয়েছে একজনের বিরুদ্ধে। খুন ও ধর্ষণের মামলা কোন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে সেটা অবশ্য রিপোর্টে সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, এর আগের ৫ দফা ভোটের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
এই দফার প্রার্থীদের মধ্যে ৫ কোটি বা তার বেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০ জন প্রার্থীর। মোট ৩০৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৬ জন অর্থাৎ ২২ শতাংশ সম্পদের নিরিখে কোটিপতি বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সবথেকে বেশি সম্পদ রয়েছে উত্তর দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্চনা মজুমদারের। তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘির নির্দল প্রার্থী বিনয়কুমার দাস। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা। পুরোটাই স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। সম্পদের নিরিখে তৃতীয় স্থানে আছেন উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের বিজেপি (BJP) প্রার্থী অমিতকুমার কুণ্ডু। তাঁর মোট সম্পদ ১৬ কোটি ৯ লক্ষ টাকা। এর পাশাপাশি দু’হাজার টাকার কম সম্পদ আছে এমন তিনজন এই দফায় প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির বিএসপি প্রার্থী সন্দীপ সরকার, মঙ্গলকোটের বিএসপি প্রার্থী আব্দুস সাবুর শেখ এবং আউশগ্রামর এসইউসি প্রার্থী মনসা মেটে।
বাৎসরিক আয়ের নিরিখে প্রথম স্থানে আছেন বারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তাঁর নিজের আয় ৫৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা হলেও অভিনেত্রী স্ত্রীর আয়ের সঙ্গে মিলিয়ে মোট আয় দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের রিটার্নে এই আয় দেখানো হয়েছে। রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী পেশায় ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কল্যাণী স্ত্রীয়ের সঙ্গে তাঁর মোট আয় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দেখিয়েছেন।
ইলেকশন ওয়াচের এই রিপোর্টে এই দফার প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা গত নির্বাচনে জিতেছিলেন তাঁদের সম্পদ ৫ বছরে কতটা বেড়েছে বা কমেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, শতাংশের হিসেবে সবথেকে বেশি সম্পদ বেড়েছে নদীয়া চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের । গত ভোটের সময় তাঁর মোট সম্পদ ছিল ২ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। এবারের হলফনামা অনুযায়ী তা বেড়ে হয়েছে ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ১১৫১ শতাংশ সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে তাঁর গত ৫ বছরে। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের তৃণমূল বিধায়ক গোলাম রব্বানির সম্পদ পাঁচ বছরে ২৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ কোটি ২১লক্ষ টাকা হয়েছে। ওই দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগরের বিধায়ক বীণা মণ্ডলের সম্পদ এই সময় বেড়েছে ৩৬ লক্ষ টাকা থেকে দু’কোটি টাকা। অন্যদিকে, নদীয়ার নবদ্বীপের তৃণমূল বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা গত বিধানসভা ভোটের আগে হলফনামায় ৭৫ হাজার টাকার সম্পদের উল্লেখ করেছিলেন। সেটা এবার কমে ৪৫ হাজার টাকা হয়েছে। ভাটপাড়ার বিজেপি বিধায়ক পবনকুমার সিংয়ের সম্পদ কমেছে। আগে তাঁর ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সম্পদ ছিল। এবার তা কমে হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। ওই জেলার নোয়াপাড়া থেকে এবার বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন সুনীল সিং। গত নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তিনি ২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার সম্পদ দেখিয়েছিলেন। এবার হলফনামায় তিনি ২ কোটি ৩ লক্ষ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।
•