শিল্পাঞ্চলে নির্দল কাঁটায় বিদ্ধ বিজেপি
শিল্পাঞ্চলের তিন আসনে নির্দলের কাঁটা পায়ে ফুটছে বিজেপি প্রার্থীদের। দুর্গাপুর পশ্চিম, দুর্গাপুর (Durgapur) পূর্বের পর বারাবনিতেও এবার দলের নেতা নির্দলে প্রার্থী হয়ে তোপ দেগেছেন বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধেই। নির্দল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট তথা সদ্য দল ত্যাগ করা বিজেপি (BJP) কিষান মোর্চার মণ্ডল সভাপতি অভিজিৎ অধিকারী বলেন, বারাবনির বিজেপি প্রার্থী অরিজিৎ রায়ের নাম কয়লা মাফিয়া লালার লাল ডায়েরিতেও থাকতে পারে। পাঁচ বছর আগে যার বাইকে পেট্রল ভরার টাকা ছিল না, তিনি কীভাবে ৭০ লক্ষ টাকার বাড়ি বানাচ্ছেন? ৩৫ লক্ষ টাকার গাড়িতে চাপছেন। কোন সোনার খনি তিনি পেলেন তা জানতেই আমাদের প্রার্থী নির্বাচনে লড়াই করছেন। শিল্পাঞ্চলের তিন কেন্দ্রে নির্দল নিয়ে যেখানে অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির তখন আবার পাণ্ডবেশ্বরের দলবদলু বিজেপি প্রার্থী তাঁর ছায়া সঙ্গীকেই নির্দলে দাঁড় করিয়েছেন। ডামি প্রার্থীর সুবিধা নিতেই এই কৌশল বলে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখা। তবে নির্দল নিয়ে ঘুঁটি সাজাতে পিছিয়ে নেই তৃণমূল কংগ্রেসও। তারাও একাধিক জায়গায় নিজেদের বিশ্বস্ত লোককে নির্দল হিসেবে মাঠে নামিয়েছে বুথের শক্তি বাড়াতে। শিল্পাঞ্চলের ৯ আসনে ১১ নির্দল প্রার্থীকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা জমে উঠেছে।
মনোনয়ন প্রক্রিয়ার শুরুতেই আদি বিজেপি নেতানেত্রীরা নির্দলে লড়াই করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা করায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় গেরুয়া শিবির। নির্দল কাঁটা তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু বরফ গলেনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। যেমন দুর্গাপুর পশ্চিমে প্রাক্তন জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে নির্দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনড় চন্দ্রমল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন লক্ষ্মণবাবুকে দুশ্চরিত্র বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। এবার তাঁর বেনিময় নিয়েও সরব হয়েছেন। নির্দল হিসেবে দুর্গাপুর পূর্ব থেকে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত অনড় থাকলেন আদি বিজেপি নেতা দীপক ঢালি।
কিন্তু মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সবচেয়ে বড় বোমা ফাটিয়েছেন বারাবনির নির্দল প্রার্থী ও তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট। বিজেপির সালানপুর মণ্ডলের কিষান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক পবন নুনিয়া আলমারি চিহ্নে লড়াই করছেন। তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট ওই মণ্ডলের কিষান মোর্চার সভাপতি অভিজিৎ অধিকারী। তিনি এনিয়ে বিজেপি প্রার্থী অরিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ওঁকে যখন যুব মোর্চার জেলা সভাপতি করার কথা চলছিল তখন জেলার ৩২ মণ্ডলের সভাপতি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর সম্পত্তি নিয়েও সেই সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বেনিময়ের অভিযোগ থাকা এমন একজনকে প্রার্থী করায় আমরা ব্যথিত। নির্দলের অনুগামীরা বলছেন, আলমারির রহস্যভেদ করতেই আলমারি চিহ্নে লড়ছেন পবনবাবু। যদিও অরিজিৎ রায় বলেন, দলের আদর্শ সৈনিক হলে এই সময় ওই নেতা এরকম মন্তব্য করতেন না। উস্কানি ও ষড়যন্ত্রেই এইসব হচ্ছে।
তবে নির্দল মনোনয়ন শুধু গোঁজ হিসেবে নয়, তা অনেক সময় ভোট বৈতরণী পার করতেও ব্যবহৃত হয়। এবার নির্বাচনে যার উদাহরণ হতে চলেছে পাণ্ডবেশ্বর। জানা গিয়েছে, জিতেন্দ্র তেওয়ারি ছায়াসঙ্গী থাকা সঞ্জয় যাদব নির্দল হয়ে লড়াই করছেন। দল পরিবর্তনের পরও জিতেন্দ্র অনুগামী সঞ্জয়কে তাঁর পাশে সর্বক্ষণ থাকতে দেখা গিয়েছে। তাহলে রহস্যটা কোথায়? সঞ্জয় বলেন, মন হল তাই দাঁড়ালাম। প্রচারে রয়েছি। আপনার দাদার প্রচারেই? এক গাল হাসলেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের, দাবি, অনেক সময়েই ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে তাঁর নিজের লোকদের তাঁর বুথ এজেন্ট হিসেবে বসিয়ে বুথে শক্তি বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও তাঁর এক বিশ্বস্ত অনুগামীকে নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। একইভাবে আসানসোল উত্তর কেন্দ্রেও একজন নির্দল দাঁড়িয়েছেন।