ভোট আর করোনার সাড়াঁশি আক্রমণে বাতিল বুকিং, কপালে হাত পর্যটন ব্যবসায়ীদের
ভোট ময়দানে করোনার সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। তাই ডুয়ার্সের অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্রে জলদাপাড়া, চিলাপাতা, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে পর্যটকদের বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে এবং করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ভোটের আগে ধীরে ধীরে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়ে চাঙ্গা হয়েছিল ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু, সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় পর্যটন (Tourism) ব্যবসায় ফের মন্দা শুরু হয়েছে। বুকিং বাতিল হওয়ায় বেসরকারি পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রমাদ গুনছেন। বুকিংয়ে কোপ পড়ছে হোমস্টেগুলিতেও। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে (COVID Second Wave) উদ্বিগ্ন হোমস্টে মালিকরা। একইভাবে বুকিং কমছে পর্যটন দপ্তরের বাংলোগুলিতেও।
লকডাউন (Lockdown) উঠে যাওয়ার পর ও করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়ায় পর্যটন দপ্তরের জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজে বুকিং আগের মতো বাড়ছিল। লজের কর্মীদের মুখে হাসি ফুটেছিল। সেই সময় সরকারি ওই লজে ৮৫-৯০ শতাংশ বুকিং ছিল।
জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজের ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহা বলেন, এখন লজের বুকিং ৩০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। ভোট ও নতুন করে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রতিদিনই পর্যটকরা বুকিং বাতিল করছেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিনের লকডাউন ও মহামারীর সময় ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসার চরম ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, ক্ষতি হয়েছিল কয়েক কয়েক হাজার কোটি টাকার পর্যটন ব্যবসা। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সেই বিপুল ক্ষতি সামলে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল পর্যটন ব্যবসা। বুকিংও বাড়ছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। এমন অবস্থায় ফের করোনার থাবা এই ব্যবসায় আঁচ পড়তে শুরু করেছে।
আলিপুরদুয়ার ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ভোটের কারণে ও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ফের আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মুখে। পর্যটকরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। রোজই বুকিং বাতিল হচ্ছে। যেভাবে বুকিং বাতিল হচ্ছে তাতে ফের বিপর্যয়ের মুখে আমরা। রাজনৈতিক দলগুলি ভোট নিয়েই ব্যস্ত। আমাদের কথা কেউ ভাবছে না।
জলদাপাড়ায় বেসরকারি পর্যটন ব্যবসায় এখন বুকিং ২৫ শতাংশেরও নীচে নেমে এসেছে। প্রতিদিনই বুকিং বাতিলের ঘটনা ঘটছে। বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে ডুয়ার্সের হোমস্টে মালিকরাও। গরমের সময় নির্জন জঙ্গলে অফবিট জায়গায় হোমস্টেগুলি পর্যটকে গিজ গিজ করত। সর্বত্র ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই পরিস্থিতি হয়। নির্বাচন ও নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ায় হোমস্টেগুলিতেও বুকিং বাতিল হচ্ছে। খাঁ খাঁ করছে হোমস্টেগুলি।
আলিপুরদুয়ার জেলায় চিলাপাতা, জলদাপাড়া ও বক্সার জঙ্গলের পাশে কোদালবস্তি, মেন্দাবাড়ি, রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, সান্তলাবাড়ি, বক্সা পাহাড়, টোটোপাড়া, রায়মাটাং, ভুটিয়াবস্তি, গারুচিরা, নিউল্যান্ডস, মারাখাতা ও শালকুমার এলাকায় প্রায় ৭০টির মতো হোমস্টে আছে। জেলায় অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের তৈরি ৫৩টি ব্লু হোমস্টেও আছে ওসব এলাকায়। কালচিনির গারোবস্তির হোমস্টে মালিক লালসিং ভুজেল বলেন, ভোট ও নতুন করে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় রোজ বুকিং বাতিল হচ্ছে। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে ফোনে দু’টি পরিবার আমার হোমস্টের বুকিং বাতিল করেছে। মনে হচ্ছে, গতবছরের মতো ফের পর্যটন ব্যবসায় বিপর্যয় আসছে। বুঝতে পারছি না সামনে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।