রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ভোটের প্রচারে বেণীমাধব শীলের বাড়িতে শশী পাঁজা

April 19, 2021 | 3 min read

ছুটছেন শশী পাঁজা (Shashi Panja)। বেণীমাধব শীলের (Benimadhab Shil) বাড়ি হয়ে অবিনাশ কবিরাজ। ছুটেই চলেছেন পাঁজা পরিবারের গৃহবধূ। উত্তর কলকাতার অলিগলি পথ। সবই তাঁর চেনা। প্রতিটি বাড়িও নখদর্পণে। কোথাও কাঠের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে উঠে যাচ্ছেন দোতালায়। আবার কোথাও চিলতে ঘরে ঢুকে পড়ছেন। সবার কাছেই তিনি ‘শশী-দিদি’। একেবারে যেন ‘ঘরের মেয়ে’। যাঁর শ্বশুর বাড়িও এ তল্লাটেই।

অজিতকুমার পাঁজার পুত্রবধূ শশী। এলাকাবাসী তাঁর চোখেই দেখেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে, জনদরদী ‘অজিতদা’কে। শশীও তাঁদের বঞ্চিত করেননি কোনও দিন। এবারের নির্বাচনেও করেননি। তাঁর হাতে মমতার সরকারের উন্নয়ন-গাঁথা প্রচারপত্র। তাতে জ্বলজ্বল করছে—‘প্রয়াত জননেতা অজিতকুমার পাঁজার পুত্রবধূ’। সেই প্রচারপত্র বিলি করতে করতে চলেছেন মন্ত্রী শশী। কারও মুখে মাস্ক না থাকলে সতর্ক করছেন। দিচ্ছেন ডাক্তারি পরামর্শও।

গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন। তার সংলগ্ন বাড়িটি এলাকার ‘ল্যান্ড মার্ক’। বঙ্গ-রাজনীতির সঙ্গেও পরিচিতি যথেষ্ট। বহু রথী-মহারথী এসেছেন এই বাড়িতে। সাধারণের জন্য সদরও ছিল হাট করে খোলা। এখনও থাকে। সেই পরম্পরা সযত্নে আগলে রেখেছেন এ বাড়ির বধূ। একতলায় দেবী দুর্গার একচালার মূর্তি। এখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ভোট সংক্রান্ত কাগজপত্র। কোথাও কোথাও স্তূপের আকারে তৃণমূলের ফ্লেক্স, ব্যানার, টুপি প্রভৃতি। ঠিক যেমন অজিতবাবুর আমলে পড়ে থাকত। সকাল তখন সাড়ে আটটা। দোতলা থেকে একতলায় এলেন শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। তিনি শশী পাঁজা। পরণে শাড়ি। দশভুজার আরতির আয়োজন করাই ছিল। আরতি করলেন নিজেই। ততক্ষণে বাড়ির সামনে ভিড় জমছে কর্মী-সমর্থকদের। প্রচারে বেরোবেন ‘দিদি’। আরতি সেরেই গাড়িতে উঠলেন শশী।

কাঠের কিংবা লোহার পুরনো সিঁড়ি… দেওয়ালে দেওয়ালে আলিঙ্গন… ঘিঞ্জি জনবসতি… পায়রার ডাক—আজও উত্তর কলকাতার নস্টালজিয়া, অহঙ্কার। গাড়ি এসে থামল ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গোপী সেন লেনে। প্রার্থীকে বরণ করলেন দলের কর্মীরা। আর সময় নষ্ট করেননি শশী পাঁজা। লেনের ছোট-বড় সব বাড়িতে ঢুকে পড়ছেন তিনি। খুব সকালের প্রচার। বিছানায় বসে তখনও আড়মোড়া ভাঙছেন অনেকেই। শশীকে দেখে ডেকে নিচ্ছেন অন্দরমহলে। বাড়ির গৃহকর্তাকে নমস্কার করে খোঁজখবর নিচ্ছেন সবার। তৃণমূলকে জয়ী করার আর্জি রাখার আগেই ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাচ্ছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে নতুন ভোটাররা।

গোপী সেন লেনে নীল ষষ্ঠীর পুজো হয়। সেখানে ফুল-মালা-মোমবাতি-ধুপ দিয়ে পুজো করলেন তৃণমূল প্রার্থী। তারপর আবারও দৌড়। যাচ্ছেন বাড়ির দরজায় দরজায়। কখনও কাঠের সিঁড়িতে খটখট করতে করতে দোতলা, তিনতলা ভাঙছেন। দরজায় কড়া নেড়ে বলছেন, ‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শশী পাঁজা।’ এই অঞ্চলে বহু হিন্দি ভাষাভাষী মানুষ বাস করেন। তাই হিন্দিতেও তৈরি হয়েছে প্রচারপত্র। কেউ কেউ সমস্যার কথা শোনাচ্ছেন। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে দাবিও করছেন। নোটবুকে সবকিছু লিখে রাখছেন শশী।

গোপি সেন লেনের সঙ্গেই যুক্ত তারক চ্যাটার্জী লেন। এখানকার ৫/১/বি বাড়ির মালিক অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়িতে সটান ঢুকে পড়লেন প্রার্থী। হেঁশেলে তখন গরম তেলে মাছ ছাড়ার চোঁ চোঁ শব্দ। শশী জানতে চাইলেন, কি মাছ ভাজা হচ্ছে? গৃহিনী বললেন, কাতলা মাছ। অনিরুদ্ধ’র অনুরোধ—‘দিদি, একপিস অন্তত খেয়ে যান।’

‘এখন খুব তাড়া। পরে একদিন এসে খাবো। তবে সেদিন শুধু মাছভাজা নয়’— হাসতে হাসতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন শশী। আর তখনই তৃণমূল কর্মীরা ডাক পাড়লেন নারকেল দা আছো নাকি?’ ডাক শুনে আবারও হাসি শশীর মুখে। আসলে, যিনি ‘নারকেল দা’ তাঁর প্রকৃত নাম খোকন দে। পাড়ায় তিনি ওই নামেই খ্যাত। খোকনবাবুকে নিয়ে রসিকতার রেস মিটতে না মিটতেই প্রার্থী ততক্ষণে ঢুকে পড়েছেন বিদগ্ধ পঞ্জিকা লেখক বেণীমাধব শীলের বাড়িতে। তাঁর পরিবারের লোকের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে তৃপ্ত হলেন শশী। করলেন ভোট-প্রার্থনাও। বেণীমাধববাবুর ভাইপো গোরাচাঁদ শীল বললেন, ‘শশী পাঁজার ভোট-ভাগ্যে বড় প্লাস পয়েন্ট তাঁর পরিচিতি। এবং সবার সঙ্গে সহজেই মিশতে পারেন।’ রাস্তায় দাঁড়ানো অনিকেত দাসও শশীকে দেখে বলেই ফেললেন—‘আপনি একজন ডায়নামিক লিডার।’

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে দশটার ঘর ছুঁইছুঁই। বেণীমাধবের উত্তরসুরীর আশীর্বাদ নিয়ে শশী তখন অবিনাশ কবিরাজের বাড়িতে। সেখানে প্রচার সেরে চা-পানের সাময়িক বিরতি। চেয়ার পেতে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডার মেজাজে তৃণমূল প্রার্থী। তারপর একে একে অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, জয় মিত্র স্ট্রিট। মাথার উপর সূর্যকে সাক্ষী রেখে শশী পাঁজার হ্যাটট্রিকের ডাক দিচ্ছেন কর্মীরা। শশী শুনে বলছেন—‘শ্যামপুকুরে পরপর তিনবার কেউ জেতেননি। মানুষের আশীর্বাদে আমি এবার নজির গড়তে চাই।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal Assembly Elections 2021, #Benimadhab Shil, #Shashi Panja

আরো দেখুন