করোনা আতঙ্কে ফের বন্ধ হচ্ছে রাজ্যের একাধিক সিনেমাহল
রাজ্যের সিঙ্গল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলোর (Cinema Hall) আকাশে আবার দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা (Covid 19) সংক্রমণ। বলিউডের একাধিক ছবির মুক্তি পিছিয়ে গিয়েছে। বাংলায় সেই অর্থে পয়লা বৈশাখে কোনও বড় ছবি মুক্তি পায়নি। ফলে লোকসান বাঁচাতে এবারে অনেক মালিকই সিনেমা হল বন্ধের কথা ভাবছেন। সূত্রের খবর, আগামী ২৩ এপ্রিল থেকেই শহরের একাধিক সিনেমা হল অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের দরজা বন্ধ করছে। জেলার সিনেমাহলগুলোও এবারে ধীরে ধীরে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে খবর। পিছিয়ে যেতে পারে একাধিক বাংলা ছবির মুক্তিও।
গত বছর পুজোয় একগুচ্ছ ছবি মুক্তি পেয়েছিল। শারদ আবহে ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন হল মালিক থেকে শুরু করে ছবির পরিবেশকরা। কিন্তু সিনেমা হল সূত্রে খবর, এই বছর একশো শতাংশ দর্শকাসনের অনুমোদনের পরেও সেই অর্থে সিনেমাহলে মানুষ ভিড় করছেন না। এর জন্য অনেকেই বড় ছবির অভাবকে দায়ী করছেন। প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বললেন, ‘এই মাসে কোনও ছবির মুক্তি নেই। যে ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে সেগুলো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর সমান। তাই হলে দর্শক আসছেন না। তার উপরে করোনাও বাড়ছে। আমি হল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি।’
পয়লা বৈশাখে অন্যান্যবার একাধিক ছবি মুক্তি পায়। এবারে সেখানে মুক্তি পেয়েছিল ‘ট্যাংরা ব্লুজ’ ও ‘বাঁশুরী’। মহারাষ্ট্রে লকডাউনের জন্য ‘চেহরে’, ‘সূর্যবংশী’ ও ‘থালাইভি’র মতো একাধিক বড় বাজেটের হিন্দি ছবির মুক্তি পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে বাংলা নববর্ষে রাজ্যের সিঙ্গল স্ক্রিনে লক্ষ্মীর আগমন নেই বললেই চলে। যদিও এর আগে ‘চিনি’ ও ‘প্রেম টেম’ কিছুটা হলেও দর্শক টেনেছিল। ভালো ব্যবসা করেছে ইংরেজি ছবি ‘গডজিলা ভার্সেস কং’। ইম্পার তরফে শ্যামল দত্ত বলছিলেন, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না। মার্চ মাস পর্যন্ত মানুষ তাও হলে আসছিলেন। কিন্তু এখন করোনা আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় দর্শক আর আসছেন না। পয়লা বৈশাখের ছবিও দর্শক টানতে ব্যর্থ। আগামী দিনে আরও কঠিন পরিস্থিতি আসতে চলেছে।’
বিধানসভা ভোটের বাজারে জনসভা অব্যাহত। এই ঘটনাকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হল মালিকের কথায়, ‘বাংলায় তো এখনও লকডাউন হয়নি। তাহলে কেন সবাই ছবির রিলিজ পিছিয়ে দিচ্ছেন? আসলে ছবির উপরে কনফিডেন্স নেই বলেই তো কেউ ছবি রিলিজ করতে চাইছেন না। উল্টে দোষ দেওয়া হচ্ছে দর্শকদের।’ শহরের এক ছবি পরিবেশক শতদীপ সাহার আক্ষেপ, ‘রাজনৈতিক দল এখন মানুষের আগে ভোটকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। অথচ, মজার কথা সেই সরকার তৈরিতে ইন্ডাস্ট্রির তারকাদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে!’ সিনেমা হল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বইতে গিয়ে শ্যাওড়াফুলি উদয়ন সিনেমার কর্ণধার পার্থসারথী দাঁর হিমসিম খাওয়ার জোগাড়। বললেন, ‘সরকার বা শিল্পী কেউই তো সিঙ্গল স্ক্রিন নিয়ে বিচলিত নন। উমপুনের জন্য এখনও অনেক হল মালিকের টাকা পাওয়া বাকি আছে। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে এরপর যে কী হবে বুঝতে পারছি না।’ বারুইপুর শো হাউজের কর্ণধার শান্তনু রায়চৌধুরী বলছেন, ‘সার্ভিস চার্জের নামমাত্র টাকা বাড়লে কি আর হল চলে? ভোটের পর যে সরকারই আসুক না কেন, তারা যদি আমাদের লোন দেয়, তাহলেই হয়তো সিনেমা হলগুলো বেঁচে থাকবে।’
জানা যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলায় কোনও ছবি রিলিজ করবে না। দেব অভিনীত ‘টনিক’ ছবিটির মুক্তি পিছিয়ে পুজোয় নিয়ে গিয়েছেন প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী। ঈদে মুক্তির দিন নির্দিষ্ট ছিল জিৎ-মিমি অভিনীত ‘বাজি’র। মে মাসের শেষের দিকে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ছবি ‘বেলাশুরু’। শোনা যাচ্ছিল, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’ এবং অরিন্দম শীলের ‘মায়াকুমারী’ মে মাসে মুক্তি পেতে পারে। আগামী মাসেই মুক্তি পাওয়ার কথা অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত ছবি ‘সাইকো’র। তালিকায় ছিল অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিটিও। এখনও সংশ্লিষ্ট ছবির নির্মাতাদের তরফে ঘোষণা না হলেও ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর ছবিগুলোর মুক্তি অনির্দিষ্টকাল স্থগিত হয়ে যেতে পারে।