কোভিড পরিস্থিতিতে একদফায় ভোট করতেই পারত কমিশন: মমতা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী প্রচার যাতে ব্যাহত না হয়, তাই করোনার প্রকোপ সত্ত্বেও বাকি তিন দফার ভোট একদিনের সারতে রাজি হয়নি নির্বাচন কমিশন। সোমবার এমনই অভিযোগে গর্জে উঠলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সোমবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া, হেমতাবাদ এবং কালিয়াগঞ্জে তিনটি প্রচার সভায় অংশ নেন মমতা। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার-সভা রয়েছে। সেগুলি যাতে ডিসটার্ব না হয়, সে কারণেই আমাদের প্রস্তাব মানা হল না। করোনার (Covid 19) প্রকোপ বাড়ছে, তার মধ্যে আট দফায় নির্বাচন! আমরা চেয়েছিলাম, বাকি তিনদফার ভোট একদিনে করা হোক। সেটা করা যেত। কিন্তু করল না। আর কত সুবিধা নেবেন মোদি?’ কমিশনের কাছে ফের মমতার আর্জি—‘এখনও আপনাদের হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, তিনটে দফার নির্বাচন বাকি আছে। একদিনে ইলেকশনটা করে দিন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’ তাঁর পরামর্শ, ‘একদিনে সম্ভব না হলে দু’দিনে করুন। একটা দিন অন্তত বাঁচান। বিজেপির কথা শুনে সবটা হেঁয়ালি করবেন না। মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন না!’
তিনটি জনসভাতেই এদিন সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়েছেন তৃণমূল (Trinamool) সুপ্রিমো। ভাষণের অধিকাংশটাই তিনি ব্যয় করেছেন করোনা পর্বে মানুষকে সচেতন করার কাজে। একইসঙ্গে শুনিয়েছেন, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও করোনার টিকা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ঢিলেমির কথা। নতুন করে করোনা ছড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিকেই আঙুলও তুলেছেন তিনি। মমতা বলেছেন, ‘গত ছ’মাস করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। অনেক লড়াই করে তা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু ভোটপর্বে বহিরাগত গুন্ডাদের এনে কোভিড ছড়াল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা বাইরে থেকে লোকজন এনে এখানে করোনা ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন। রাজ্যের সব প্রান্তে যত হোটেল, গেস্ট হাউস, লজ আছে, সেখানে বাইরে থেকে আসা লোকজন ভর্তি। তারাই ছড়াল কোভিড।’ নেত্রীর অভিযোগ, ‘এখন করোনা ছড়ানোর জন্য বিজেপি দায়ী! বারবার অনুরোধ জানিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, আর্জি জানিয়েছি টিকা দেওয়ার জন্য। আমরা গোটা রাজ্যের মানুষকে তা দিতে চেয়েছিলাম। ওরা (কেন্দ্র) টিকা দিল না, ছড়িয়ে পড়ল করোনা।’ সাধারণ মানুষের কাছে মমতার আহ্বান—‘আপনারা সাবধানে থাকুন। মাস্ক পরুন, মাঝেমধ্যেই হাত ধুয়ে নিন। সুস্থ থাকুন সবাই। করোনার জন্যই বেশিক্ষণ আপনাদের আটকে রাখছি না।’
একুশের মহাসংগ্রাম যে আসলে বাংলার ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই, নির্বাচনী প্রচারের শুরুর সময় থেকে বারবার বলে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিন উত্তর দিনাজপুরের সভা থেকে ফের জনতাকে তা স্মরণ করিয়েছেন তিনি। মমতা বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ইসলাম, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, বিবেকানন্দ, পঞ্চান্ন বর্মা, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের ঐতিহ্য বাংলা থাকবে কি না, তা ঠিক করার নির্বাচন। নেতাজির ভাষায় বাংলা কথা বলতে পারবে কি না, তার নির্বাচন! বাংলা মায়ের সম্মান রক্ষার লড়াই। এবারের ভোটযুদ্ধ বাংলা বাঁচানোর! বাংলাকে গুজরাত-উত্তরপ্রদেশ হতে না দেওয়ার লড়াই! এ লড়াইয়ে আপনাদের সবার সমর্থন চাই। সবার ভোট মূল্যবান।’ প্রত্যুত্তরে আবেগ, উচ্ছ্বাস আর সোল্লাসের সায় ঝুলিতে ভরেছেন মমতা।