তিন অঙ্কেই পৌঁছবে না দল, কানাঘুষো বিজেপির অন্দরেই
২০০ আসন নিয়ে বাংলা দখল। এই দাবি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। আর চলতি ভোটপর্বে এই দাবি বারবার করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডারা। কিন্তু মুখে ২০০টি কেন্দ্রে জয়ের দাবি করলেও মাটির খবরটা কী? অর্থাৎ শেষমেশ বাংলায় বিজেপির ঝুলিতে আসবে কতগুলো আসন? আপাতত এই গ্রাউন্ড রিয়েলিটির খোঁজেই হন্যে হয়েছেন অমিত শাহ। কষছেন জয়লাভের অঙ্কও। কল্পনা এবং বাস্তবের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েই রীতিমতো সংশয়ে পড়ে গিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় পার্টি। এবং তা এতটাই যে, দলের বুথ ও ওয়ার্ড ইনচার্জদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে এ ব্যাপারে রিপোর্ট জমা দিন। কারণ বিজেপির অন্দরেই শোনা যাচ্ছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের প্রতিধ্বনি। একাংশ কানাঘুষো করছে, এবার আর তিন অঙ্কে পৌঁছনো হবে না। আর শুধুই কি বাংলা? যে পাঁচ রাজ্যে ভোটপর্ব চলছে, তার সবক’টি নিয়েই আশঙ্কায় বিজেপি। ধন্দ একটাই, পাঁচ রাজ্য থেকেই শূন্য হাতে ফিরতে হবে না তো? এত প্রচার ও আগ্রাসী দাবির পর রেজাল্ট পাঁচে শূন্য হলে?
দলীয় সূত্রেই জানা যাচ্ছে, শুধুমাত্র বিজেপির বুথ এবং ওয়ার্ড ইনচার্জদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নয়, গ্রাউন্ড রিয়েলিটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে একাধিক বেসরকারি সমীক্ষক সংস্থার থেকেও রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পুরোটা খতিয়ে দেখে তারপর সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ পেতে চাইছেন অমিত শাহরা। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যেসব রিপোর্ট জমা পড়েছে, তা বিশেষ সন্তোষজনক নয়। সম্প্রতি জেলায় একটি নির্বাচনী প্রচার সেরেই জরুরি ভিত্তিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অমিত শাহ নিজে। সেই বৈঠকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খোঁজ নিয়েছেন বাংলায় দলের আসন জয়ের গ্রাউন্ড রিয়েলিটির। আর সেই সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, দলের তৃণমূলস্তর থেকে রিপোর্ট জমা পড়লেই যেন তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে পাঠানো হয়। যাবতীয় রিপোর্ট তিনি নিজে বিশ্লেষণ করবেন।
এমনিতে নির্বাচন পাঁচ রাজ্যে হলেও বস্তুত দুই রাজ্য নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব সবথেকে থেকে বেশি শঙ্কায়—বাংলা ও অসম। তামিলনাড়ু, কেরল, ও পুদুচেরি নিয়ে বিজেপি বিশেষ আশা করছে না। সেই কারণেই বাংলা ও অসম নিয়ে বিজেপি সবথেকে চিন্তিত। এই দুই রাজ্যেও যদি দল পরাস্ত হয়, তাহলে পাঁচ রাজ্যেই ক্ষমতা অধরা থেকে যাবে। নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের কাছে সেটা হবে চরম অস্বস্তিকর। বিশেষত অসম নিয়ে উদ্বেগ চাপা থাকছে না। এই রাজ্যে মসৃণ জয়ের নিশ্চয়তা দলের একাংশের মধ্যে এখনও নেই।
জনমত সমীক্ষাগুলিতেও আগেই বলা হয়েছে এই রাজ্যে ইউপিএ ঘাড়ের কাছেই নিশ্বাস ফেলছে। ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশ হলেও, তার অনেক আগেই কংগ্রেস এবং এআইডিইউএফ প্রার্থীদের আগাম পৃথক হোটেলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই দুই দলের নেতৃত্ব। কারণ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বিজেপি একক গরিষ্ঠতা না পেলে অন্য দলের থেকে বিধায়কদের ছিনিয়ে নিতে পারে। আর তাই এআইডিইউএফের প্রার্থীদের জন্য সুদূর জয়পুরে হোটেল বুকিং করে রাখা হয়েছে। চর্চা চলছে বিজেপির অন্দরেও—সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কী হবে? ২০২১ এবং ২০২২ বিজেপির পক্ষে চ্যালেঞ্জের বছর। এই বছর পাঁচ রাজ্যে ভোট। আগামী বছর আট রাজ্যে। তাই পাখির চোখ বাংলা। সংক্রমণ মাত্রছাড়া হলেও বাংলায় মোদির জনসভা ও সমাবেশ বন্ধের কোনও ঘোষণাই যে করতে পারছে না বিজেপি।