রাজ্যের সমালোচনা করতে গিয়ে কেন্দ্রের অপদার্থতার নিদর্শন দিলেন নির্মলা
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বিজেপি নেত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman) একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন মঙ্গলবার। ভোট বাজারে এসে তিনি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা করতে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা লুকোতে পারলেন না অর্থমন্ত্রী। শিল্প নিয়ে রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে গিয়ে ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ল নিজেদের অপদার্থতার বিড়ালও।
এদিন মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসে নির্মলা সীতারামন বলেন, বাংলার শিল্পের আরও বেশি করে ‘অক্সিজেন’ প্রয়োজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে ইতিহাস টেনে আনেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক সময়ে গোটা দেশকে পথ দেখাত বাংলার শিল্প। অথচ আজ তা অত্যন্ত খারাপ জায়গায় এসে ঠেকেছে। সেই হৃত গৌরব আবার ফিরিয়ে আনা উচিত। উদাহরণ হিসেবে নির্মলা সীতারামন তুলে ধরেন দার্জিলিং চায়ের কথা। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আগে নানান ধরনের চা পাওয়া যেত। তার মধ্যে দার্জিলিং চায়ের স্থান ছিল একেবারে শেষের দিকে। বাংলার এই নিজস্ব পণ্যটি এখন অত্যন্ত হতাশাজনক জায়গায় রয়েছে। দার্জিলিং চায়ের জন্য যে ব্র্যান্ডিংয়ের প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যে উঠে আসছে অন্য একটি দিকও। তা হল, দার্জিলিং চা সহ অন্যান্য সমস্ত ধরনের চায়ের ব্র্যান্ডিং করার জন্য টি বোর্ড রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রকের আওতায়। মোদি সরকারের হাতেই চায়ের বিপণনের অন্যতম দায়িত্ব থাকলেও, তা করা হয়নি কেন, তা নিয়ে এদিন আর রা কাড়েননি নির্মলা সীতারামন। এখন তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকলেও এক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতেই। তিনি নিজে কেন দার্জিলিং চায়ের প্রসারের জন্য সেই সময় পদক্ষেপ করেননি, এখন সেই প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, দার্জিলিং চায়ের ব্যবসার প্রসারে রাজ্য সরকারের যেমন ভূমিকা থাকে, তেমন কেন্দ্রীয় সরকারও সেই দায়িত্ব একেবারে ঝেড়ে ফেলতে পারে না। তাই এটা শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতাই নয়। এ রাজ্যের কোনও পণ্যের বিপণনের ক্ষেত্রেও তারা বিমাতৃসুলভ আচরণ করে এসেছে। এদিন নির্মলা সীতারামন দাবি করেন, এ রাজ্যের সবকটি শিল্পের অবস্থা ওই দার্জিলিং চায়ের মতই। তাই বাংলার শিল্পকে এমনভাবে গড়তে হবে, যা দেশের মধ্যে সেরা হবে, অথবা গোটা দেশ যেভাবে শিল্পের পথে এগিয়ে চলেছে তার সঙ্গে সমানতালে চলবে। কীভাবে তৈরি হবে সেই শিল্পের পথ? অর্থমন্ত্রী বলেন, তা তাঁদের দলীয় নির্বাচনী ইস্তাহারে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে।
এদিন শিল্পপতিদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে সুস্থ অর্থনীতির দিকে এগতে হলে সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস বা আস্থা রাখতে হবে। তা যদি না থাকে তাহলে আর্থিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়। তবে ২০২১ সালকে কোনওভাবেই করোনার বছর হিসেবে মানতে রাজি নন নির্মলাদেবী। তিনি বলেন, ২০১৯ সাল ছিল নগদ জোগানের সঙ্কটের বছর। ২০২০ সাল ছিল করোনার বছর। এখন যদিও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, তবুও এটিকে করোনার বছর হিসেবে দেখছি না। দেশের অর্থনীতি এই পরিস্থিতিতেও পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, তা আরও বাড়বে। কিন্তু কীভাবে তা বাড়বে, সে বিষয়ে কোন দিশা দেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এমনকী শিল্প সংস্থাগুলিও ফের যেভাবে সঙ্কটের মধ্যে পড়তে চলেছে, তার থেকে উদ্ধার কীভাবে পাওয়া যাবে, তারও কোনও সদুত্তর দেননি তিনি। শুধু জানিয়েছেন করোনার টিকাকরণের জন্য ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।