কালবৈশাখীতে লণ্ডভণ্ড শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি
মাত্র ১৫ মিনিটের ঝড়ে শিলিগুড়ি শহর ও জলপাইগুড়ি জেলা কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার ঝড়ের তাণ্ডবে দুই জায়গায় বহু গাছ, দোকানের সাইনবোর্ড, বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ভেঙে পড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক বাড়ি। এর জেরে দুই শহরের বহু এলাকায় লোডশেডিং হয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ বহু রাস্তা বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ছিল নির্জলা। এদিকে, জলপাইগুড়িতে ঝড়ে একজন জখম হন। সবমিলিয়ে দু’জায়গায় বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। একইসঙ্গে ঝড়ের দাপটে ধান ও ভুট্টাচাষে, চা বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অক্ষরেখা উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত। এর জেরেই ওই ঝড় হয়েছে।
এদিন সকাল সোয়া ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ির আকাশে কালো মেঘ জমে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। তা চলে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এর জেরে শহরের মহানন্দা সেতুর কাছে কদমগাছ উপড়ে পড়ায় ‘লাইফ লাইন’ হিলকার্ট রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একইভাবে বন্ধ হয়ে যায় নবীন সেন রোড। কলেজপাড়ায় কৃষ্ণচূড়া গাছ পড়ে একটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মনসা মন্দিরের কাছে একটি বহুতলে ভেঙে পড়ে গাছ। পানিট্যাঙ্কি মোড়ে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং ভেঙে একটি কমপ্লেক্সের ছাদে পড়ে। একই দৃশ্য দেখা যায় মহানন্দাপাড়া, হাকিমপাড়ার বিবেকানন্দ স্কুল, মিলনপল্লি হাউজিং কমপ্লেক্স, মাল্লাগুড়ি, রথখোলা, পাকুড়তলা মোড় প্রভৃতি এলাকায় ।
বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়ের দাপটে সুপারি, কদম, ছাতিম, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, বট গাছ ভেঙেছে। এরকম প্রায় ৮০টি গাছ ভেঙে পড়ে। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই। শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক প্রিয়দর্শিনী এস বলেন, সিভিল ডিফেন্সের ভলান্টিয়ার ও কর্মীরা অভিযানে নামেন। গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। শিলিগুড়ি পুরসভার কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, ঝড়ে কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রতিটি বরোর মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে।
ঝড়ের সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা লোডশেডিংয়ে ডুবে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এদিন বিকেল পর্যন্ত বহু এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। বিকেলের পর বিদ্যুৎ এলেও লো ভোল্টেজ ছিল। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ পানীয় জল না মেলায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে, গাছ ও হোর্ডিং ভেঙে পড়ায় বহু এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। বিদ্যুতের বেশকিছু পোল উপড়ে পড়ে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কিছুটা সময় লাগে।
জলপাইগুড়ি জেলাতেও আছড়ে পড়ে ঝড়ের তাণ্ডব। জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঝড়ের দাপট ছিল সবচেয়ে বেশি। এখানে বাড়ি ভেঙে জখম হন গীতারানি মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধা। এখানে ১০০টি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন আদরপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক বাদুড়। নাগরাকাটা, ধূপগুড়ি ও ময়নাগুড়িতেও ঝড় ও বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় নাগরাকাটা ব্লকের খেরকাটা বস্তির ৩ হাজার পরিবার অন্ধকারে রয়েছে।
জলপাইগুড়ি জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ চলছে। পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রতিটি ব্লক প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা এলেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে।