রাজ্যের ৬ দফা ভোটে ১৫ গুণ বাড়ল করোনা, উদ্বেগ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আশঙ্কাই ধীরে ধীরে সত্যি হচ্ছে বাংলায়। প্রথম থেকে ষষ্ঠ দফার নির্বাচন—এই সময়সীমার মধ্যে রাজ্যে দৈনিক করোনা (COVID19 ) সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে প্রায় ১৫ গুণ। শতকরা হিসেবে ১৫০০ শতাংশ। বারবার তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো দাবি করে এসেছেন, বাকি দফার ভোট একদিনে করা হোক। সেই প্রস্তাব মান্যতা পায়নি। বরং এখনও বাংলায় দু’দফার নির্বাচন বাকি। তারপর পরিসংখ্যান কোথায় দাঁড়াবে, সে নিয়েই চিন্তিত স্বাস্থ্যদপ্তর।
রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৭ মার্চ, অর্থাৎ প্রথম দফার ভোটের দিন বাংলায় দৈনিক করোনা আক্রান্ত ছিল ৮১২ জন। ১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার দিনই সেই হিসেব দ্বিগুণ হয়ে যায়। দৈনিক সংক্রমণ পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৪৩-এ। আর সদ্য শেষ হওয়া ষষ্ঠ দফার নির্বাচনের দিনে (২২ এপ্রিল) দৈনিক কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা?—১১ হাজার ৯৪৮।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণভাবে এক থেকে এক বা একাধিক জনে করোনা সংক্রমণের জন্য ছ’দিন থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। দীর্ঘ ভোটপর্বের সৌজন্যে সেই হিসেব বাড়তি গতি পেয়েছে। যে জেলাগুলিতে একাধিক দফায় নির্বাচন হয়েছে, সেখানকার পরিসংখ্যান চিত্রটা আরও স্পষ্ট করছে।
তবে শুধুমাত্র একাধিক দফায় ভোট বা প্রচার, জমায়েত, র্যালি, জনসভা, পথসভা, বাড়ি বাড়ি জনসংযোগই নয়, অত্যন্ত সংক্রামক মিউট্যান্ট স্ট্রেইনও রাজ্যে করোনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর পাশাপাশি মাস্ক না পরা, বা সামাজিক দূরত্ব না মেনে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হাজার হাজার মানুষের যোগদানের মতো ঘটনা তো রয়েইছে।
২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচন ছিল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ এবং পুরুলিয়ায়। স্বাস্থ্য বুলেটিন জানাচ্ছে, ওই তিন জেলায় সেদিন সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৫, ১০ এবং ১৩। দেড় সপ্তাহ পর ৬ এপ্রিল তা বেড়ে হয় যথাক্রমে ২৭, ৪৭ এবং ২৯। খেয়াল রাখতে হবে, ১ এপ্রিল ফের দুই মেদিনীপুরের বাকি কেন্দ্রগুলিতে ভোট ছিল। সেদিন ভোট ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাংশ এবং বাঁকুড়াতেও। ক’দিনের ব্যবধানে একই জেলার দুই ভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের ‘কুফল’ পড়েছে ১০ এবং ১৭ এপ্রিলের পরিসংখ্যানে। ওই দু’দিন পশ্চিম মেদিনীপুরে দৈনিক সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ১৯ ও ৫৬। আর পূর্ব মেদিনীপুরে সেই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৮৪ ও ১৬৫।
দফায় দফায় নির্বাচনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করোনা কীভাবে বেড়েছে, তার আরও একটি উদাহরণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তিন দফায় ভোট হয়েছে এখানে। ১ তারিখ জেলায় দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৯। পরের দফা, অর্থাৎ ৬ এপ্রিল সংক্রমণ বেড়ে হয় দ্বিগুণের বেশি—১৩০। আর ১০ এপ্রিল ২৯১ জন। এই তিন দফায় ভোটের ফল কোভিড সংক্রমণে কতটা পড়েছে, তার প্রমাণ মিলছে ১৭ এপ্রিলের পরিসংখ্যানে। সেদিন দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে হয়েছে ৪৯১! কমবেশি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনাতেও।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান ডাঃ উদাস ঘোষ বলেন, দফায় দফায় নির্বাচন অবশ্যই করোনা বাড়িয়েছে। তবে অন্য কারণও কিছু আছে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ যোগীরাজ রায় বলেন, কোভিড বিধি না মেনে র্যালি, মিটিং-মিছিলের ফল ভুগছি আমরা।