অক্সিজেন সঙ্কটে মোদি সরকারের ভরসা বেসরকারিকরণের কোপে কারখানাগুলিই
সঙ্কটের ত্রাতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ইস্পাত কারখানাগুলি আপাতত দেশের অন্যতম প্রধান অক্সিজেন উৎপাদক ও সরবরাহকারীতে পরিণত হয়েছে। অথচ বিগত কয়েক বছরে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা ঢালাও বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এমনকী গত জানুয়ারি মাসেই স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ১০ শতাংশ বিলগ্নিকরণের ঘোষণা করা হয়েছে। বিশাখাপত্তনম থেকে নাগারনা — একের পর এক ইস্পাত কারখানার বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া আপাতত দূরে সরিয়ে রেখেছে কেন্দ্র। ওই কারখানাগুলি থেকেই এখন তরল অক্সিজেন সংগ্রহ করে তা রেলের অক্সিজেন এক্সপ্রেস করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাসপাতালে জোগান দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে গত বছর থেকেই রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন বাড়ছিল। তাই প্রশ্ন উঠছে, অক্সিজেন উৎপাদনকারী স্টিল প্লান্টগুলির বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? বিরোধী দলগুলির দাবি, বেসরকারিকরণের পরিবর্তে এই স্টিল প্লান্টগুলিকে রুগ্ণাবস্থা থেকে বের করে আনাই সবথেকে জরুরি। কারণ, স্টিল প্লান্টে আগে থেকেই অক্সিজেন উৎপাদনের পরিকাঠামো রয়েছে। সর্বোপরি কোভিড পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের চাহিদা এই রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানাগুলিই মেটাচ্ছে।
বিশাখাপত্তনম, জামশেদপুর, রাউলরকেল্লা, বোকারো, দুর্গাপুর, ভিলাইয়ের ইস্পাত কারখানা থেকে গত বছর থেকে ৩৫ হাজার টন লিক্যুফায়েড মেডিক্যাল অক্সিজেন জোগান দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অক্সিজেন সংক্রান্ত রিভিউ বৈঠকে রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থাগুলিকে আরও বেশি অক্সিজেন উৎপাদন ও জোগানের দায়িত্ব নিতে বলেন। এরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সরকারি ও বেসরকারি ইস্পাত কারখানাগুলি সবথেকে বেশি অক্সিজেনের চাহিদা মেটাচ্ছে। অথচ সেই ইস্পাত কারখানাগুলিরই বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত অনায়াসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি গত এক বছরে নতুন করে মেডিক্যাল অক্সিজেন (Oxygen) নির্মাণের প্লান্ট নির্মাণেও সরকার কোনও সদিচ্ছা দেখায়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের অধীনস্থ সংস্থা নাগারনার স্টিল প্লান্টকে পৃথক করে নিয়ে সেটির বিলগ্নিকরণ করা হবে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক বিলগ্নিকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা। এটিকে বিযুক্তিকরণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ১০ শতাংশ বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবথেকে বেশি বিরোধিতা তৈরি হয়েছে বিশাখাপত্তনমের রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড নিয়ে। এই স্টিল প্লান্ট দীর্ঘদিন লোকসানে চলার পর ২০১৯ সালে ৯৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। অর্থাৎ ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেখিয়েছে। ভাইজাগের এই স্টিল প্লান্ট সরকারের নবরত্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অন্তর্গত। ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট একইসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেইলের অধীনে থাকা তামিলনাড়ুর সালেম এবং কর্ণাটকের ভদ্রাবতী স্টিল প্লান্টেরও বিলগ্নিকরণ হবে। সরকারের বিলগ্নিকরণের ভাবনায় রয়েছে দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট, ফেরো স্ক্র্যাপ নিগম লিমিটেড।
অক্সিজেনের অভাব ভারতে এমন পর্যায়ে পৌঁছছে যে, ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) অথবা ভ্যাকসিনের কাঁচা মালের জন্য একের পর এক দেশে সরকারকে ফোন করতে হচ্ছে। ব্রিটেন থেকে সৌদি আরব, ইওরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কাছ থেকে সরঞ্জাম সাহায্য নিতে হচ্ছে ভারতকে।