বাংলায় অক্সিজেনের ঘাটতি নেই: রাজ্য সরকার
নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে সোমবার নবান্নে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা বেডের সংখ্যা, অক্সিজেনের উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। তাঁকে জানানো হয়েছে, রাজ্যে অক্সিজেনের কোনও ঘাটতি নেই। এখানে প্রতিদিন অক্সিজেন উৎপাদন হয় ৪৯৭ মেট্রিক টন। আর রোজ প্রয়োজন হয় ২২৩ মেট্রিক টন। এখন করোনার কারণে চাহিদা বেড়ে হয়েছে ৩১৮ মেট্রিক টন। তবুও অক্সিজেনের কোনও সঙ্কট নেই। অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এখনও স্বাস্থ্যদপ্তরের পূর্ণ মন্ত্রী। তবুও এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়েই করোনা পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেন তিনি। সেখানে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি এবং স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে এই মুহূর্তে করোনা চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার বেড রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ হাজার সরকারি এবং সাত হাজার বেসরকারি হাসপাতালে। বেড আরও বৃদ্ধি করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন, যাদবপুরের কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে ৩০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল করছে মেডিকা হাসপাতাল। এছাড়া গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামও পরিদর্শন করবে মেডিকা কর্তৃপক্ষ। পরিকাঠামো দেখে সেখানে অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা যায় কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নিউটাউনের হজ হাউস এমনিতেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে রয়েছে। সেখানে ২০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল করবে চার্নক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তীর্ণতে ইতিমধ্যে সেফ হোম চলছে। সেখানকার পরিকাঠামো আরও উন্নত করে কোভিড হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সল্টলেকের নেত্রালয়ে বেড বাড়াচ্ছে আর এন টেগোর হাসপাতাল। ঢাকুরিয়া ও মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালেও বেড বাড়ানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, ১১২টি হাসপাতালে অক্সিজেন (Oxygen) পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। ৯৩টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। যার মধ্যে মাত্র পাঁচটি অনুমোদন করা হয়েছে। তিনটি প্লান্টের কাজ চলছে। অক্সিজেন নিয়ে যাতে মজুতদারি, কালোবাজারি না করা হয়, নবান্ন থেকে সেদিকে পুলিসকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া, দু-একদিনের মধ্যে কোভিড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করতে চলেছে নবান্ন। তার মাধ্যমে রাজ্যের প্রধান সচিবালয়ে একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ড্যাশবোর্ড’ তৈরি করা হচ্ছে। যেখানে কোন হাসপাতালে কত বেড রয়েছে, তা পরিষ্কার জানতে পারবেন রোগী বা তাঁর পরিবার।
এদিকে, করোনার (Covid 19) কারণে কেউ অনাথ হয়ে গেলে তার দায়িত্ব নেবে বারাকপুরের রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ মিশন। এদিন নবান্নকে মিশন কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে, করোনার কারণে যে সন্তানরা অনাথ হচ্ছে, তাদের দায়িত্ব নেবে তারা। শুধু অনাথ নয়, পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তির যদি করোনায় মৃত্যু হয়, এবং সেই পরিবারে যদি ছয় থেকে চোদ্দ বছর বয়সি কোনও সন্তান থাকে, তাহলে তাদের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করবে তারা। রাজ্য সরকারও মিশনের এমন মানবিক প্রস্তাবের প্রশংসা করেছে। সেই সঙ্গে এদিন মিশন কর্তৃপক্ষ কোভিড রিলিফ ফান্ডে পাঁচ লক্ষ টাকা দান করে। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, তাদের পরিচালিত হাসপাতালে কোভিড বেড বাড়ানো হচ্ছে।