সাধারণ সর্দি-জ্বর করোনার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হতে পারে, দাবি গবেষণায়
‘যোগ্যতমের উদবর্তন’। বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের তত্ত্ব অনুযায়ী বৈচিত্রময় এই বিশ্বে প্রতিটি প্রজাতি একে অপরের সঙ্গে বা ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে লড়াই করে। যে সেই যুদ্ধে জিতে যায়, সেই প্রজাতি টিকে থাকে। প্রতিপক্ষ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই তত্ত্বকেই খাড়া করে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানালেন, কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস সার্স-কোভ-২-কে পরাস্ত করতে সক্ষম সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য দায়ী রাইনো ভাইরাস। অর্থাৎ, কেউ সাধারণ জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হলে সেই ভাইরাস সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ থেকে রেহাই দিতে পারে।
সাধারণ সর্দি-জ্বরের ৪০ শতাংশ দায়ী থাকে রাইনো ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অসুখ ক্ষণস্থায়ী। অ্যান্টিজেন তথা ভাইরাস হোস্টের শরীরে বেঁচে থাকার লড়াই চালায়। আর বেশিরভাগ ভাইরাসের ক্ষেত্রে মানবশরীরই হল গুরুত্বপূর্ণ হোস্ট বা আধার। কিছু তুতো ভাইরাস হোস্টের শরীরে একসঙ্গে বসবাস করতে পারে। যেমন অ্যাডিনো ভাইরাস অন্য ভাইরাসের সঙ্গে সহাবস্থান করে। কিন্তু, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের বেশিরভাগই ‘লোন ওয়ারিওর’। অর্থাৎ, তারা একা যুদ্ধ করে এবং কারও সঙ্গে হোস্ট তথা মানব শরীরে সহাবস্থান করে না।
এই তত্ত্বের উপর ভর করেই গবেষণা শুরু করেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। করোনা বা কোভিড (Covid 19) রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস সার্স-কোভ-২ যেহেতু মানুষের শ্বাসযন্ত্রে হানা দেয়, তাই গবেষকরা পরীক্ষার জন্য শ্বাসযন্ত্রের একটি প্রতিকৃতি ব্যবহার করেন। এবং সেখানে তাঁরা রাইনো এবং সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে ছেড়ে দেন, যাতে ভাইরাস দু’টি মানব কোষকে সংক্রামিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, একইসঙ্গে দু’টো ভাইরাসকে ছাড়ার জন্য অস্তিত্বের লড়াইয়ে করোনা ভাইরাসকে হারিয়ে দিয়েছে রাইনো ভাইরাস। শ্বাসযন্ত্র সংক্রামিত করতে পেরেছে শুধুমাত্র রাইনো ভাইরাস। আবার যখন রাইনো ভাইরাসকে ওই শ্বাসযন্ত্রে ২৪ ঘণ্টা আগে ছাড়া হয়েছে, তখন দেখা গিয়েছে, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ ঘটানোর কোনও সুযোগই পায়নি। এমনকী যখন এর উল্টোটা করা হয়েছে, তখনও পরে ঢোকা রাইনো ভাইরাস সার্স-কোভ-২-কে মানব কোষ থেকে বের করে দিয়েছে। আর এই পরীক্ষা থেকেই বিজ্ঞানীদলটি সিদ্ধান্তে এসেছে যে রাইনো ভাইরাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সার্স-কোভ-২ পরাস্ত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের সদস্য প্রফেসর পাবলো মুরসিয়া বলেন, রাইনো ভাইরাস মানব শ্বাসযন্ত্রের এপিথেলিয়াল কোষে অনাক্রম্যতা তথা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করছে। আর সেটাই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিভাজন রুখে দিচ্ছে। তবে, এর মানে এই নয় যে, সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে ইতি টানতে পারে। কেননা রাইনো ভাইরাসের সংক্রমণ সার্স-কোভ-২-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দিতে পারে না। মুরসিয়ার কথায়, সাধারণ সর্দি-কাশি সেরে গেলে রাইনো ভাইরাসের তৈরি করা প্রতিরোধ ক্ষমতাও কয়েকদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। আর সেকারণেই কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে টিকাকরণ বড় অস্ত্র।