আজ বুথফেরত সমীক্ষার দিকেই তাকিয়ে সব দল
অবশেষে সমাপ্ত হচ্ছে পাঁচ রাজ্যের ভোট-উৎসব। আজ, বৃহস্পতিবার এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal elections 2021) শেষ দিন। অসম, কেরল, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির ভোটগ্রহণ মিটে গিয়েছে ৬ এপ্রিলের মধ্যেই। একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে নির্বাচন কমিশন বেছে নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গকে। দেশজুড়ে চরম করোনা সংক্রমণের বিপদের মধ্যেও তাই এই রাজ্যে আট দফায় নজিরবিহীন ভোট হয়েছে। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হবে আগামী ২ মে। তবে তার আগেই আজ সন্ধ্যায় একঝাঁক সমীক্ষক সংস্থার এক্সিট পোলের (Exit Polls) ‘রেজাল্ট’ দেখা যাবে। প্রকৃত ফলাফলের আগেই মিলবে পাঁচ রাজ্যের মানুষের রায়ের গতিপ্রকৃতির পূর্বাভাস। যদিও ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটগ্রহণের আগে জনমত সমীক্ষা এবং ভোটের পর বুথফেরত সমীক্ষা, দুই-ই অনিশ্চিত। অর্থাৎ কখনও প্রকৃত ফলাফলে জনমত এবং বুথফেরত সমীক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। আবার মাঝেমধ্যে হতাশও হতে হয়। তবু এক্সিট পোলের পূর্বাভাসের প্রতি সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলির আগ্রহ থেকে যায়। তাই আজ সন্ধ্যায় হতে চলা পাঁচ রাজ্যের বুথফেরত সমীক্ষার দিকে টেনশন ও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সব রাজনৈতিক দল।
পাঁচ রাজ্যের মধ্যে বাংলাই নরেন্দ্র মোদির কাছে সবথেকে বড় প্রেস্টিজ ফাইট। দক্ষিণের তিন রাজ্যে বিজেপি এককভাবে শক্তিহীন। অসমে বিজেপি এখনও ক্ষমতায়। সুতরাং, গোটা দেশের নজর এবার বাংলার উপর। করোনা ব্যর্থতার যাবতীয় নিন্দার ঝড় মুছে ফেলা যাবে একমাত্র যদি মোদি বাংলা জয় করতে পারেন। রাজনৈতিকভাবে মোদির উচ্চতা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবে। ভারতীয় জনসঙ্ঘ ও বিজেপির ইতিহাসে তিনিই হবেন সর্বাধিক শক্তিশালী নেতা। কারণ, গেরুয়া শিবিরের আর কেউ আজ পর্যন্ত বাংলা জয় করতে পারেনি। পক্ষান্তরে, যদি মোদিকে বাংলায় পরাস্ত করতে পারেন, তাহলে নতুন ইতিহাস গড়ে গোটা ভারতের সবথেকে শক্তিশালী বিজেপি বিরোধী নেত্রীতে পরিণত হয়ে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুতরাং বাংলার ফলাফল যাইহোক সেটি এক নতুন মাইলফলকের দিকে ঠেলে দেবে ভারতকে।
বিজেপির কাছে সবথেকে বড় প্রত্যাশা হল অসম, বাংলা, ও পুদুচেরি দখল করা। পুদুচেরিতে অবশ্য এআইএডিএমকের সঙ্গে জোট গড়েছে তারা। কিন্তু, ফলাফল যদি বিপরীত হয়, অর্থাৎ পাঁচে বিজেপি শূন্য হলে সেটি যতটা না বিজেপির পরাজয়, তার থেকে অনেক বেশি মোদির বিপর্যয় শুরুর ইঙ্গিত। ভোটের আগে জনমত সমীক্ষার সিংহভাগই জানিয়েছিল, অসমে ইউপিএ এবং এনডিএ জোটের জোরদার টক্কর হতে চলেছে। বিজেপি সামান্য হলেও এগিয়ে আছে। তবে, ইউপিএ ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলবে। বাংলায় প্রায় প্রতিটি জনমত সমীক্ষাই তৃণমূল কংগ্রেসকে এগিয়ে রেখেছে। যদিও কয়েকটি সমীক্ষার বক্তব্য, ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হবে। কেউই পাবে না একক গরিষ্ঠতা। আবার এক-দু’টি সমীক্ষার পূর্বাভাসে বিজেপি এগিয়ে আছে।
কেরলে এবারও বেশ কিছু জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জয়ী হতে পারে বামফ্রন্ট। তামিলনাড়ুতে কংগ্রেস ও ডিএমকের জোট। পুদুচেরিতে এআইএডিএমকে ও বিজেপি জোট এগিয়ে। এই জনমত সমীক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ এক্সিট পোল আজ হবে কি না, আপাতত সেটা জানতে প্রত্যেকেই উদগ্রীব। তবে বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলেও টেনশন কমছে না। কারণ, শেষ বিধানসভা ভোট হয়েছে বিহারে। সেখানে এক্সিট পোলের সিংহভাগ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং, আজকের বুথফেরত সমীক্ষা আরও ৪৮ ঘণ্টার জন্য জল্পনা, চর্চা, আলোচনার পথ হয়তো খুলে দেবে। কিন্তু শেষ হাসি কে হাসবে, সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে রবিবার পর্যন্ত।