কোভিড চিকিৎসার পরিকাঠামো, এনজেপি রেল হাসপাতাল নিয়ে ক্ষোভ রেলকর্মীদের
এনজেপি রেল হাসপাতালে করোনা সংক্রামিত রেলকর্মীদের জন্য চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় ক্ষোভ বাড়ছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রামিত তিনজন রেলকর্মীর মৃত্যুতে এনজেপি ও শিলিগুড়ির রেলকর্মীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের স্বার্থে অবিলম্বে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে এনজেপি রেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দেয় ডিওয়াইএফের এনজেপি-ফুলবাড়ি জোনাল কমিটি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াল চেহারা নিতেই এই অঞ্চলের রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের প্রত্যেকের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, শিলিগুড়ির হাসপাতালে কিংবা নার্সিংহোমে বেড পেতে নাজেহাল হতে হয়েছে। কোথাও বেড নেই। রেল হাসপাতালে যদি ব্যবস্থা থাকত, তাহলে রেলকর্মীদের চিকিৎসা, অক্সিজেনের নিশ্চয়তা থাকত। অভিযোগ, দু’দিন হল একটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হলেও সেখানে সম্পূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে না। রোগীর শারীরিক অবস্থা একটু জটিল হলেই রেফার করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, কোথাও বেড পাওয়া যাচ্ছে না।
ডিওয়াইএফের এনজেপি-ফুলবাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, শেষ ২৪ ঘণ্টায় এনজেপিতে তিনজন রেলকর্মী করোনা সংক্রামিত অবস্থায় মারা গিয়েছেন। আরও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন বিভিন্ন নার্সিংহোমে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি। একদিকে বেড পাওয়া যাচ্ছে না, আবার বেড পেলেও চার-পাঁচ লাখ টাকা বিল হচ্ছে। এই সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি অন্তত ৫০ বেড নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হোক। যাতে এই বিস্তীর্ণ রেল এলাকার বাসিন্দারা সঠিক চিকিৎসা পান।
মালিগাঁওয়ের রেল হাসপাতালে কোভিড ইউনিট রয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে করোনা সংক্রামিতদের চিকিৎসার উপযোগী করে কয়েক হাজার কোচ সাজিয়ে রেখেছে রেল। তাহলে এনজেপির মতো গুরুত্বপূর্ণ রেল হাসপাতালে আধুনিকীকরণ ও কোভিড ইউনিট চালুর ব্যাপারে এখনও কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দ বলেন, রেল চাইলেই নিজের ইচ্ছেতে কোথাও কোভিড হাসপাতাল খুলতে পারে না। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর যদি আমাদের প্রস্তাব ও অনুমোদন দিলে তবেই রেল সেই পরিকাঠামো গড়ে দেবে। এনজেপি রেল হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপার ডাঃ মিলনকান্তি মজুমদার বলেন, রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার আমাদের হাসপাতাল পরিদর্শন করে গিয়েছে। তারা এখানে কোভিড হাসপাতাল তৈরির সবুজ সঙ্কেত দিলেই আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব।
এজেপিতে অনেকটা এলাকা নিয়ে এই রেল হাসপাতাল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের পুরনো রেল হাসপাতালগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। অভিযোগ, বরাবর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এই হাসপাতালের আধুনিক সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশামতো বাড়েনি। এনজেপির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বড় ক্যাম্পাসে হাসপাতালটি থাকলেও এর উন্নতিকরণে নজর দেওয়া হয়নি। রেলের অধীনে এই অঞ্চলের কোনও রেলকর্মীকে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিতে গেলে যেতে হবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দপ্তর অসমের মালিগাঁওয়ের রেল হাসপাতালে।
এনজেপি রেল হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, কাউকে বাইরে যেতে হয় না। শিলিগুড়িতে কিছু নার্সিংহোমের সঙ্গে চুক্তি করা রয়েছে। প্রভাবশালীরা তাঁদের ও পরিবারের সদস্যদের সামান্য অসুস্থতাতেই সেই সব নার্সিংহোমে চিকিৎসা করান। এ জন্য রেলকে মোটা টাকা বিল দিতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই রেওয়াজ চলে এসেছে। কিন্তু, কেউ এনজেপি রেল হাসপাতালের আধুনিকীকরণের দাবি তোলেননি। তার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ আইসিসিইউ, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা এখানে নেই।