অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তমসাচ্ছন্ন
গেরুয়া শিবিরকে ধুয়ে মুছে সাফ করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তার করেছে তৃণমূল। প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট এবং ২১০ এরও বেশি আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্যে ক্ষমতায় ফিরছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২রা মে ঐতিহাসিক এই ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজ্যজুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে।
এবারের নির্বাচনে যে লড়াইটা আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সেটি হল শুভেন্দু-মমতা দ্বৈরথ। শুভেন্দুর ওপর অন্ধের মতো ভরসা করেই খেলতে নেমেছিল বঙ্গ বিজেপি। শুভেন্দু নিজের আসনে অল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে জিতলেও রাজ্যে বিজেপির হল ভরাডুবি। মেদিনীপুরের গড় অক্ষত রেখে অধিকারী পরিবারকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে ঘাসফুল শিবির। এমনকি নন্দীগ্রামের ফল নিয়েও ধোয়াঁশা রয়েছে জনমানসে। কারচুপির অভিযোগে আদালতে যাচ্ছে তৃণমূল।
প্রশ্ন উঠছে, এর পর কী হবে শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ? একসময় যে গেরুয়া শিবিরকে বাংলা উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শুভেন্দু, এই শোচনীয় পরাজয়ের পর দল কি তাকে আর গুরুত্ব দেবে? এছাড়া, মীরজাফর এবং গদ্দার তকমা মুছে ফেলতে পারবেন কি তিনি?
শুভেন্দু ছাড়াও, অধিকারী পরিবারের আরও অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে শুভেন্দুকে ভরসা করে গেরুয়া শিবিরে গিয়ে নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁদের ভাগ্যেই বা কী লেখা আছে? ধরা যাক, শুভেন্দুর বাবা সাংসদ শিশির অধিকারীর কথা। তৃণমূলের একসময়ের দাপুটে এই নেতা জীবনের শেষ লগ্নে এসে তিনিও কী হারিয়ে যাবেন বঙ্গ রাজনীতি থেকে! শোনা যাচ্ছিল তাঁকে নাকি কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল করতে পারে বিজেপি। এই ফলের পর সেই সম্ভাবনাও তিমিরে।
তৃণমূল কংগ্রেসের আরেক সাংসদ, শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী খাতায় কলমে এখনও তৃণমূলেই আছেন। কিন্তু তার ওপরেও কি আর ভরসা রাখতে পারবে তৃণমূল কংগ্রেস? যদিও শোনা গেছিল তিনিও বিজেপিতে যাবেন, শেষ পর্যন্ত শিবির বদল করেননি তিনি। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে কাজেকর্মে বুঝিয়ে দিয়েছেন দাদার পাশেই আছেন। ভবিষ্যতেও যে পরিবারের অন্যদের মতো দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না দিব্যেন্দু, সেই ভরসা কি থাকবে দলের?
বিধানসভা ভোটার নিরিখে পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি লোকসভা আসনেই এগিয়ে তৃণমূল। সেখানে অধিকারী পরিবারের সদস্য দাঁড়ালে জিততে পারবেন তো? এই প্রশ্নই ঘুরছে এখন জনগণের মুখে মুখে। অধিকারী পরিবারের নাম কি মুছে যাবে বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে? এই প্রশ্নই এখন বাংলার ‘মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন’।